রোনালদোর কাছে বয়স শুধুই সংখ্যা
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/02/05/ronaldo_2.jpg)
বিখ্যাত লেখক ফ্রান্ৎস কাফকা বলেছিলেন—‘সৌন্দর্য দেখার সামর্থ্য যারা রাখে, তারা কখনও বৃদ্ধ হয় না।’ ওয়াল্ট ডিজনির মতে, ‘হাসি সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা একটি বিষয়। কল্পনার কোনো বয়স নেই আর স্বপ্ন চিরস্থায়ী।’
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বোধহয় দুই মহারথীর কথাগুলোকে ধারণ করেন মনেপ্রাণে। তার মাঝে বয়সের ছাপ নেই। আছে তারুণ্যের উদ্দ্যম।
‘নিজেকে আমি সবসময় বিজয়ী হিসেবে ভাবি। আমি যতটা হারি, তারচেয়ে বেশি জিততে চাই। সবসময় চেষ্টা করি মনোযোগ ধরে রাখার। আমি জানি, এটি সহজ নয়। কিন্তু, জীবনে কিছুই সহজ না।’—কথাগুলো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর। তিনি এমন একজন, যিনি কথার সঙ্গে কাজের মিল রাখার জন্য সর্বোচ্চ উজাড় করে দেন। সময়ের সঙ্গে নিজেকে প্রমাণ করেছেন রোনালদো। এখন সময় উপভোগের। সেটি রোনালদো করছেন, তাড়িয়ে তাড়িয়ে খেলোয়াড়ি জীবনের শেষ সময়টা উপভোগ করছেন পর্তুগিজ মহাতারকা।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/05/1.jpg 687w)
দেখতে দেখতে বয়স ছুঁয়েছে ৪০ এর ঘর। ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৫ তে জন্ম নেওয়া শিশুটি আজ ক্রীড়া দুনিয়ার নক্ষত্র। চল্লিশ বছর বয়স নিয়ে কবির সুমনের একটি গান আছে। ‘চালসের গান’ শিরোনামের গানটির কিছু কথা এমন—
“আজকে যে বেপরোয়া বিচ্ছু, শান্ত সুবোধ হবে কাল সে
চোখের সঙ্গী হবে চশমা, চল্লিশ পেরোলেই চালশে!”
চল্লিশে মানুষ থেমে যায় বোধহয়। পুরোনো সত্তাকে পেছনে ফেলে নতুন ভাবনায় অন্য জগতে পা রাখে। রোনালদো এখানে ব্যতিক্রম। এই বয়সেও তার খেলার প্রতি নিবেদন ভাবনাতীত। একই গানে কবির সুমনের পরের কয়েক লাইনের মতোই সিআরসেভেন-
“অথবা যে আজ নিঃশব্দ, স্বশব্দে ফেটে যাবে কাল সে
ভুলে যাবে চোখে আছে চশমা, ভুলে যাবে চোখে আছে চালশে!”
সিআরসেভেন তো বয়স ভুলে বসে আছেন। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে কোথায় অবসর নেবেন, তা নয়। তিনি চোখ রাখছেন নতুন চ্যালেঞ্জে। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘চাইলে আমি অবসর নিতে পারি। আমার অবসর নেওয়া উচিতও। তবে, আমি খেলাটা চালিয়ে যেতে চাই। যখন মনে হবে এবার একেবারেই থামা উচিত, আর খেলব না।’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/05/2.jpg 687w)
২০২৪ এর ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ এর ৫ ফেব্রুয়ারি। মাঝে কেটেছে ৩৬৬ দিন। বদলেছে অনেক কিছু। বদলায়নি রোনালদোর গোলক্ষুধা। সাফল্যের তৃষ্ণা। বয়স তাকে পরিণত করেছে। বুঝতে শিখিয়েছে কোথায় কখন কীভাবে এগোতে হবে। এই একটি বছরে রোনালদো করে গেছেন অর্জনের পর অর্জন। রেকর্ড ও ভিন্নতার স্বাদে বছর কাটালেন তিনি। মাঠ ও মাঠের বাইরে সরব রোনালদো গত এক বছরে অনেক নতুনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ভক্ত-সমর্থকদের।
২০২৪ সালে ফুটবলার রোনালদো হাজির হন নতুন অবতারে। ইউটিউবে ‘ইউর ক্রিস্টিয়ানো' নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল চালু করেন সিআরসেভেন। পর্তুগিজ মহাতারকার জনপ্রিয়তা ঠিক কতটা, সেটি কাগজে-কলমে হিসেব করা বেশ কঠিন। রোনালদো ইউটিউব চ্যানেল খুলবেন আর তা নিয়ে হইচই পড়বে না, এমন ভাবা বোকামি। ইউটিউবের ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময়ে ৫০ মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবারের রেকর্ড গড়েন তিনি। প্রথম ৫ মিনিটেই এক লাখ সাবস্ক্রাইবার পূর্ণ হয়। দেড় ঘণ্টায় স্পর্শ হয় এক মিলিয়নের ঘর। মাঠের বাইরে রোনালদো দেখান আরও একটি ঝলক। স্পর্শ করেন এক বিলিয়ন অনুসারীর সংখ্যা। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, এক্স, ইউটিউবসহ আর কয়েকটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মিলিয়ে রোনালদোর অনুসারী সংখ্যা ১০০ কোটির বেশি। যার ধারেকাছে নেই কেউ।
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/05/3.jpg 687w)
পেশাদার ক্যারিয়ারের (ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে) ৯০০ (৯২৩) গোলের মাইলফলক রোনালদো ছুঁয়েছেন ২০২৪ সালে। যে কীর্তিতে রিয়াল মাদ্রিদ বাধ্য হয়েছিল তাকে শুভেচ্ছা জানাতে। অথচ, রিয়াল মাদ্রিদের একটি অভ্যাস হলো, ক্লাব ছেড়ে যাওয়া ফুটবলারদের নিয়ে কোনো মাতামাতি করে না তারা। ব্যাপারটা এমন, যে চলে যায় তাকে নিয়ে কোনো আলাপে রাজি নয় ক্লাবটি। সেখান থেকে রোনালদোর সাফল্যে পোস্ট না করে পারেনি লস ব্লাংকোরা।
কদিন আগে ঝুলিতে ভরেন আরেকটি মাইলফলক। ইতিহাসের প্রথম ও একমাত্র ফুটবলার হিসেবে ক্লাব ফুটবলে ৭০০ ম্যাচে জয়ের স্বাদ পান তিনি। দেখে কে বলবে, এই লোকের বয়স ৪০! থামতে চান অন্তত হাজার গোল ছুঁয়ে।
বিখ্যাত সুইডিশ অভিনেত্রী ইনগ্রিড বার্গম্যানের একটি উক্তি দিয়ে ইতি টানা যাক। বার্গম্যান বলেছিলেন, ‘বয়স বেড়ে যাওয়া অনেকটা পর্বত আরোহনের মতো। নিঃশ্বাস নিতে অনেক সময় কষ্ট হবে। কিন্তু, চূড়ায় ওঠার পরের দুর্দান্ত দৃশ্য সব কষ্ট ছাপিয়ে যাবে।’
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2025/02/05/4.jpg 687w)
রোনালদো তো এভাবে একটু একটু করেই পর্বত চূড়ায় উঠেছেন। কতবার পতিত হয়েছেন সমালোচনায়, ব্যর্থতায়। দম বন্ধ হয়ে এসেছে। উঠে দাঁড়িয়েছেন। সেই চূড়ায় উঠবেন বলে সংকল্প করেছেন। আজ তিনি ঠিক সেখানেই, যেখান থেকে গোটা পৃথিবীকে জানান দিতে পারেন, আমিই মহারাজ। তাতে আপত্তি করার মানুষ খুব একটা নেই।
চল্লিশেও তারুণ্যের ডানায় চড়ে বেড়ানো ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দস সান্তোস অ্যাভেইরোকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা!