আফগানদের বিপক্ষে বড় হারে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় বাংলাদেশ

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন এনে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। তবে ব্যর্থতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। ব্যর্থতার ষোলোকলা পূর্ণ করেছেন ব্যাটাররা। আগের ইনিংসে যেখানে উইকেট ছিল ব্যাটিং সহায়ক, একটু পরেই সেটা যেন হয়ে গেল বোলিং ফাঁদ। বাংলাদেশ সেই ফাঁদে ধরা দিয়ে আরেকবার গুটিয়ে গেল একশ পার হওয়ার আগেই, জুটল হোয়াইটওয়াশের লজ্জা।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৯৩ রান করে আফগানিস্তান। জবাব দিতে নেমে ২৭.১ ওভারে মাত্র ৯৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। আফগানরা জয় পায় ২০০ রানের বড় ব্যবধানে। ওয়ানডেতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটাই রানের হিসাবে সবচেয়ে বড় হার। আগের রেকর্ডটা ১৪২ রানের, ২০২৩ সালে চট্টগ্রামে।
সিরিজে প্রথমবার একাদশে সুযোগ পেয়েছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। কিন্তু সেই সুযোগ যেন হেলায় হারালেন তিনি। সাইফ হাসানের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নেমে একের পর এক ডট বল খেলে ২৪ বলে মাত্র ৭ রান করে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন তিনি।
সেই শুরু এরপর সেই ধারা বজায় রেখেছেন বাকিরা। একের পর এক উইকেট বিলিয়ে যোগ দিয়েছেন যাওয়া-আসার মিছিলে। বাংলাদেশের ১১ জন ব্যাটারের মাঝে মাত্র একজন ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পেরেছেন।
তিন নম্বরে নেমে উইকটে ছটফট করতে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তকে (১৬ বলে ৩) ফিরিয়ে মুক্তি দেন বিলাল সামি। ধারাবাহিক ব্যর্থতায় হৃদয় ফেরেন ১২ বলে ৭ রান করে।
বাকিদের ব্যর্থতার ভিড়ে একপ্রান্ত আগলে রেখে খেলে যাচ্ছিলেন সাইফ। হাফসেঞ্চুরির কাছে গিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন তিনিও। ৫৪ বলে ৪৩ রান করে রশিদের বলে বোল্ডআউট হয়ে বিদায় নেন। তিনিই একমাত্র ইনিংসে দুই অঙ্কের ঘর ছুঁতে পেরেছেন।
এরপর গতি বাড়ে যাওয়া-আসার মিছিলে। ১৯ ওভারে টানা দুই বলে উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৯ বলে ৬ রান করা মেহেদী হাসান মিরাজ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। পরের বলেই রানআউটে উইকেট বিলিয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে ফেরেন শামীম পাটোয়ারী।
নুরুল হাসান সোহান (৬ বলে ২), রিশাদ হোসেনরাও (৭ বলে ৪) ফেরেন দ্রুতই। এরপর একশ পার করার চেষ্টায় থাকা হাসান মাহমুদ ২৩ বলে ৯ রানে ফিরলে সেই আশাও শেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ৯৩ রানেই।
এর আগে টস হেরে বোলিংয়ে করতে নেমে ম্যাচের প্রথম ৩০ ওভারে আফগানিস্তানের ব্যাটারদের কোনো চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেননি নাহিদ-হাসানরা। বিপরীতে তাদের শাসন করে ছুটেছেন ইব্রাহীদ জাদরান-রহমানুল্লাহ গুরবাজরা।
প্রথম ৩০ ওভারে বাংলাদেশের সাফল্য ছিল কেবল একটি উইকেট। ১৬ ওভারে গুরবাজকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন স্পিনার তানভীর ইসলাম। ফেরার আগে গুরবাজ খেলেন ৪৪ বলে ৪২ রানের ইনিংস।
একটা সময় মনে হচ্ছিল সিরিজে প্রথমবার ৩০০ রান ছুঁয়ে ফেলবে আফগানরা। শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেনি তারা। টপঅর্ডার ব্যাটারদের দেখানো পথে হাঁটতে পারেনি আফগানরা। নবী ছাড়া বাকিরা মোটামুটি ব্যর্থ হয়ে ফেরেন।
বাংলাদেশের হয়ে আশার প্রদীপ হয়ে দেখা দেন স্পিনার সাইফ হাসান। পরিমিত বোলিংয়ে আফগানদের চেপে ধরে পরের তিন উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে কিছুটা ম্যাচে ফেরান তিনি। তার শিকার হয়ে ফেরেন সেদিকুল্লাহ অটল (৪৭ বলে ২৯), হাসমতুল্লাহ শাহিদি (১০ বলে ২) ও ইকরাম আলিখিল (১৩ বলে ২)।
বাংলাদেশের বোলারদের আফসোসের নাম জাদরান এদিনও ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। তবে কাটা পড়েছেন নার্ভাস নাইনটিতে। ৯৫ রান করে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি।
শেষদিকে ব্যাট হাতে আবারও হাতে ঝড় তোলেন মোহাম্মদ নবী। চার-ছক্কার বৃষ্টি নামিয়ে ৩৭ বলে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আফগানিস্তান : ৫০ ওভারে ২৯৩/৯ (গুরবাজ ৪২, জাতরান ৯৫, সেদিকুল্লাহ ২৯, হাসমতুল্লাহ ২, ইকরাম ২, ওমরজাই ২১, রশিদ ৮, খারোটি ১০, গজনফার ০, নবী ৬৭*, বিলাল ০*; নাহিদ ৮.২-০-৫৬-০, হাসান ৬-০-৫৭-০, তানভীর ১০-০-৪৬-২, মিরাজ ৯.৪-০-৬৭-১, রিশাদ ১০-০-৪৩-০, শামীম ২-০-১২-০, সাইফ ৪-১-৬-৩)।
বাংলাদেশ : ২৭.১ ওভারে ৯৩/১০ (সাইফ ৪৩, নাঈম ৭, শান্ত ৩, হৃদয় ৭, মিরাজ ৬, শামীম ০, সোহান ২, রিশাদ ৪, তানভীর ৫, হাসান ৯, নাহিদ ২*; ওমরজাই ৬-০-২০-১, গজনফার ৭-০-২৫-০, বিলাল ৭.১-০-৩৩-৫, খারোটি ১-০-৩-০, রশিদ ৬-১-১২-৩)।
ফলাফল : আফগানিস্তান ২০০ রানে জয়ী।