লাল কাঁকড়ার রাজ্যে একদিন
নিশ্চুপ হয়ে যখন আপনি বেলাভূমিতে অবস্থান নেবেন, তখনই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসবে একদল লাল রঙের কাঁকড়া। আপনার গতিবিধি ওরা লক্ষ করবে। এরপর আট পায়ে ভর করে দৌড়াতে শুরু করবে বালুর বুকে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রঙিন হবে চরটি। মাইলজুড়ে এই দৃশ্য দেখা যাবে লাল কাঁকড়ার চরে। গায়ের রঙ লাল বলে, ওদের নাম হয়েছে ‘লাল কাঁকড়া’। আর লাল দেহের কাঁকড়াদের বসতির কারণেই এ স্থানটির নাম হয়েছে ‘লাল কাঁকড়ার চর’। চরটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে, অসংখ্য লাল বর্ণের কিছু ছিটিয়ে রাখা রয়েছে। এ যেন দেহের রঙে রঙিন একটি রাজ্য।
লাল কাঁকড়ার চরের অবস্থান
পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটায় লাল কাঁকড়ার চরের অবস্থান। কুয়াকাটার খাজুরা থেকে খালগোড়া পর্যন্ত আন্ধারমানিক মোহনার বেলাভূমি লাল কাঁকড়ার বিচরণ। কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে অল্প সময়ের দূরত্বেই দেখা মিলবে এই চরটির। কুয়াকাটা সৈকত থেকে সেখানে যেতে হবে মোটরসাইকেলে। যেতে পথে ছোট এক নদীর মোহনা মিলবে। খেয়া নৌকায় পাড়ি দিয়েই ফের মোটরসাইকেলে ১৫-২০ মিনিট সামনে গেলেই লাল কাঁকড়ার চর।
যা দেখবেন
এ চরে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে লাল কাঁকড়ারা। বালুকারাশিতে ছুটোছুটিতে মত্ত থাকে ওরা। এই বিচরণভূমিটি যেন এক অপূর্ব বিরল দৃশ্য। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বিমোহিত হয় আগতরা। সাগরে ভাটা থাকাকালে লাল কাঁকড়া বালুর নিচের গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে। বিচরণ করে সৈকতজুড়ে। দৌড়াদৌড়ি করে, খেলতে থাকে একে অপরের সঙ্গে। অপূর্ব বিরল এই ভোঁ দৌড় দেখতে ছুটে যায় দর্শনার্থীরা।
ছোট ছোট লাল কাঁকড়ারা যখন ছুটে বেড়ায়, তখন মনে হবে পুরো দ্বীপটি লাল গালিচায় ঢাকা। যা দূর থেকে দেখলে একটু ভিন্নরকম লাগবে। রোদ উঠলে ওরা গর্ত থেকে বের হয়। তাকিয়ে থাকে রোদের দিকে। ওরা বালু থেকে মাটিকে আলাদা করে। যা দেখলে মনে হবে, পুরো বিচটিই দক্ষ কোনো শিল্পীর সুচিন্তিত ক্যানভাস। যেন আলপনার পসরা বসেছে বেলাভূমিতে।
লাল কাঁকড়ারা মানুষ- কিংবা মোটরসাইকেলের শব্দ পেলেই গর্তে লুকিয়ে পড়ে। ফলে হেঁটে গেল কাছ থেকে লাল কাঁকড়া দর্শনের সাধ অপূর্ণই থেকে যেতে পারে। তবে মোটরসাইকেলে গেলে চলতি অবস্থায় স্পষ্টভাবে লাল কাঁকড়া দেখা যায়। মোটরসাইকেল থামিয়ে কাছে গেলেই নিমিষেই নিজের গর্তে অবস্থান নেবে এই কাঁকড়ারা।
যাতায়াত খরচ:
ঢাকার সায়দাবাদ ও গাবতলী থেকে কুয়াকাটা রুটের একাধিক বাস চলে। সেসব বাসে সরাসরি কুয়াকাটাতে পৌঁছানো যাবে। যাতায়াত ভাড়া ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া লঞ্চে করে আসা যাবে কুয়াকাটার পথে। লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ১৫০০, ডাবল কেবিন ২৬০০ টাকা। ডেকে জনপ্রতি ভাড়া ৩০০ টাকা। লঞ্চ থেকে নেমে লোকাল ট্রান্সপোর্টে কুয়াকাটা অবধি আসতে হবে। এতে খরচ পড়বে আরো ১০০ টাকা।
চরের কাঁকড়া দর্শন ও যাতায়াতের জন্য সৈকতেই মিলবে ভাড়ায় মোটরসাইকেল। আনা-নেওয়াসহ জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর পথে খেয়াপারের জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা। দরদামও করা যাবে।
থাকা-খাওয়া
কুয়াকাটায় আগতদের আবাসিক সেবা দিতে গড়ে উঠেছে শতাধিক হোটেল-মোটেল। মাত্র ৫০০ থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা অবধি আরামদায়ক কামরা প্রস্তুত রয়েছে পর্যটকদের সেবায়। আর খাবারের চাহিদা পূরণ করতে এখানে রয়েছে একাধিক রেস্তোরাঁ। এসব রেস্তোরাঁয় মিলবে একাধিক সামুদ্রিক মাছ ও শুঁটকি মাছের ভর্তা।
পরামর্শ
যেকোনো সময়েই লাল কাঁকড়া দেখা যাবে না। জোয়ারের সময় এই কাঁকড়াদের দেখা মিলবে না। যেতে হবে ভাটার সময়। আবার বর্ষাকালে পানিতে সৈকত তলিয়ে থাকলে লাল কাঁকড়ার দেখা মেলা কঠিন।
অনেকেই লাল কাঁকড়া ধরতে উন্মুখ হয়ে যায়, ধাওয়া করে। এতে গুরুতর জখম হয় ওদের। কেউ ধরতে গিয়ে মেরে ফেলছে। এসব কারণে লাল কাঁকড়ার বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তাই ওদের বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকুন।