ঈদের ছুটিতে
তাজমহলের শহর আগ্রায়
তাজমহলের কথা আমাদের সবারই জানা। তাজমহলকে সামনাসামনি দেখতে চান না এমন মানুষ পাওয়া মনে হয় সত্যিই দুষ্কর। আমরা সবাই জানি তাজমহল ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তবে আগ্রায় আরো অনেক মোগল স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি না। মোগলদের এই অসাধারণ নিদর্শনগুলো দেখতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন আগ্রা থেকে।
যা করতে হবে
আপনি যদি আকাশপথে যেতে চান, তাহলে প্রথমে ঢাকা থেকে দিল্লি। তারপর দিল্লি থেকে আগ্রা যেতে পারেন। তবে আপনি যদি স্থলপথে যেতে চান তাহলে আপনি শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার থেকে সৌহার্দ্য বাসের টিকেট নিতে পারেন । টিকেটের মূল্য জনপ্রতি এক হাজার ৭০০ টাকা। তবে কলকাতার টিকেট আপনি পাবেন কমলাপুর ও শ্যামলী থেকে। কলকাতায় যেয়ে ফেয়ারলি প্লেস নামক জায়গায় যেতে পারেন। ট্যাক্সি আপনাকে সেখানে নিয়ে যাবে। ফেয়ারলি প্লেস থেকে সরকারি সহায়তায় বিদেশিদের সুলভমূল্যে টিকেট কেটে দেওয়া হয়। সেখান থেকে আগ্রার ট্রেন টিকেট কেটে নিন। এখানকার কর্মকর্তারা অত্যন্ত আন্তরিক, তারা আপনাদের যথেষ্ট সহায়তা ও তথ্য দেবেন। ট্রেন ও সিটের ওপর ভিত্তি করে টিকেট মূল্য হয়ে থাকে, তবে ৮০০-৩৪০০ টাকা পর্যন্ত টিকেটের মূল্য হতে পারে। কলকাতা থেকে ট্রেনে আগ্রা পৌঁছাতে প্রায় ৩৪-৩৬ ঘণ্টা লেগে যায়। তবে এখন কলকাতা থেকে আগ্রা সুপার ফাস্ট ট্রেনসেবা চালু হয়েছে, যা আরো দ্রুত পৌঁছায়। তবে ট্রেনে আপনার একটুকুও খারাপ লাগবে না, কারণ সিটগুলো স্লিপার কোচ হয়ে থাকে এবং ট্রেনেই সুলভমূল্যে ভাত-মাংস-সমুচা-খিচুড়ি-বিরিয়ানির মতো খাবারের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়া ট্রেনের জানালা দিয়ে কখনো পাহাড়, কখনো তৃণভূমি, কখনো বা বন আপনাকে মুগ্ধ করবে।
কোথায় থাকবেন
আগ্রা পর্যটন এলাকা হওয়াতে এখানে অনেক ভালো হোটেল রয়েছে। আগ্রা স্টেশনে নেমে স্টেশন থেকে বের হয়ে অনেক বেবি ট্যাক্সি দেখতে পাবেন তারাই আপনাকে নানা হোটেল ঘুরে দেখাবে। আগ্রায় আপনি ১২০০-২৫০০ রুপির মধ্যে ভালো হোটেল পেয়ে জাবেন। তবে এর চেয়ে বেশি দামের হোটেলও রয়েছে এখানে।
কী দেখবেন
আগ্রা ফোর্ট
লালচে দেখতে এই ফোর্টটি দূর থেকেই আপনার চোখে পড়বে। ভেতরে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি মহল, দরবার হল, বাগান ইত্যাদি। পুরো জায়গাটি ঘুরে দেখতে দু-তিন ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। এর প্রতিটি অংশে মোগল আমলের প্রতিটি কারুকার্য আপনাকে অভিভূত করতে বাধ্য। এখান থেকে দূরে তাজমহলও দেখা যায় । বিদেশিদের জন্য প্রবেশমূল্য ৫৫০ রুপি।
তাজমহল
তাজমহল সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছুই নেই। তাজমহলের সৌন্দর্য প্রকৃতপক্ষে অনুভবের বিষয়। আপনি যতই দেখবেন ততই মুগ্ধ হবেন। তাজমহল দেখতে হাতে কমপক্ষে তিন-চার ঘণ্টা নিয়ে প্রবেশ করবেন। তারপর এক জায়গায় বসে প্রথমে প্রাণভরে কিছুক্ষণ এর মায়াময় সৌন্দর্য উপভোগ করুন। বিদেশিদের জন্য তাজমহলের প্রবেশমূল্য ১০০০ রুপি, তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য ৫৩০ রুপি। মনে রাখবেন, বাংলাদেশ সার্কভুক্ত একটি দেশ। টিকেট কাটার সময় আপনাকে এক বোতল পানি এবং তাজমহলে প্রবেশের জন্য মোজা ফ্রি দেওয়া হবে। আরেকটি বিষয় খেয়াল রাখবেন, কোনো রকম গাইড না নিয়ে নিজেরাই তাজমহল ঘুরে দেখুন।
ইতমাত-উদ-দৌলা টম্প
সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি এই নিদর্শনটি দেখতে অনেকটা তাজমহলের মতো বলে স্থানীয় লোকেরা অনেকেই একে ‘বেবি তাজ’ বলে থাকে। যমুনা নদীর তীরে এই নিদর্শনটি কারুকার্য এতটাই নিখুঁত যে আপনি নিমিশেই অভিভূত হয়ে যাবেন। বিদেশিদের জন্য প্রবেশমূল্য ১১০ রুপি।
আকবরের সমাধি
আকবরের সমাধিও আগ্রা শহরে অবস্থিত। এটি একটি পাঁচতলা প্রাসাদের মতো দেখতে। এর মনোরম কারুকার্য যে কোনো ব্যক্তির চোখ জুড়াবে। সামনে রয়েছে বিস্তীর্ণ বাগান। সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য প্রবেশমূল্য ২৫ রুপি।
আরামবাগ
এটি মোগলদের তৈরি করা পুরোনো বাগান। মোগল সম্রাট বাবর যমুনা নদীর তীরে এটি নির্মাণ করেন। মনোমুগ্ধকর এই স্থানটির প্রবেশমূল্য ১৫ রুপি (সার্কভুক্ত দেশগুলোর জন্য)।
এ ছাড়া মরিইয়াম-উজ-জামানির সমাধি এবং শপিং-এর জন্য মিনা বাজার ঘুরে দেখতে পারেন ।
যা মনে রাখবেন
১। আপনার পাসপোর্টটি সব সময় সঙ্গে রাখুন।
২। টিকেট কাটার সময় আপনার পরিচয় দিন। অনেকেই বাংলাদেশি হয়েও ভারতীয়দের পরিচয়ে টিকেট কাটেন। মনে রাখবেন ধরা পড়লে জরিমানা হতে পারে।
৩। কোনো রকম গাইড বা দালালের কথা শুনবেন না। নিজেই ঘুরে ঘুরে দেখুন। প্রয়োজনে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করতে পারেন, তারা অত্যন্ত আন্তরিক।
৪। হোটেল নেওয়ার সময় একটু দেখেশুনে নিন। ট্যাক্সি ড্রাইভারকে কয়েক টাকা বকশিশ দিলে সে-ই আপনাকে দরদামে সাহায্য করতে পারে।
৫। মিনাবাজার থেকে কিছু কেনার সময় অবশ্যই রসিদ নিতে ভুলবেন না। প্রয়োজনে বর্ডারে রসিদ দেখাতে হতে পারে।
৬। সবার সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করুন।