টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষায় মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষায় আদেশ জারি করেছে সরকার। ‘বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩’-এর অধীনে দেওয়া ক্ষমতাবলে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এই আদেশ জারি করা হয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর দেশের গুরুত্বপূর্ণ দুটি জলাভূমি এবং অন্যতম সংবেদনশীল জলজ বাস্তুতন্ত্র। অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও নৌচলাচল, অবৈধ বালু উত্তোলন, নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবহার, জলজ বন ধ্বংস, অতিরিক্ত বালাইনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার এবং বর্জ্য নিঃসরণসহ পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় ‘টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর সুরক্ষা আদেশ’ জারি করা হয়েছে।
টাঙ্গুয়ার ও হাকালুকি হাওর জন্য প্রতিপালনীয় ১৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আদেশে। সেগুলো হচ্ছে—
১. হাওর অঞ্চলে পাখি অথবা পরিযায়ী পাখি শিকার, পরিযায়ী পাখিসমৃদ্ধ অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে হাঁস পালন, গাছ কাটা এবং হাওরের জলজ বনের কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
২. হাওরের জলজ গাছের (হিজল, করচ ইত্যাদি) ডাল কেটে ঘের নির্মাণ বা মাছের আশ্রয়ের কাঁটা হিসেবে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
৩. পর্যটক বা হাউসবোট অভয়াশ্রম বা সংরক্ষিত হিসেবে ঘোষিত এলাকাসহ জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর বা হাওর অধিদপ্তরের চিহ্নিত হাওরের সংবেদনশীল এলাকায় (যেমন: পাখি বা মাছসহ জলজ প্রাণীর আবাসস্থল, প্রজনন কেন্দ্র বা বন্য প্রাণীর চলাচলের স্থান) প্রবেশ করতে পারবে না।
৪. সরকারের অনুমতি ছাড়া বর্ণিত হাওর এবং এর ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন কর যাবে না।
৫. পরিবশগত ও সামাজিক প্রভাব নিরূপণ সাপেক্ষে সরকারের অনুমতি ছাড়া হাওরের জলস্রোতের স্বাভবিক প্রবাহ বিঘ্নিত করা যাবে না।
৬. হাওর এলাকায় ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট বা পরিবর্তন করতে পারে, এমন কাজ করা যাবে না।
৭. শিক্ষা সফর ও বিদেশি পর্যটক পরিবহনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পূর্বানুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
৮. অনুমোদনের শর্ত অনুযায়ী যাত্রী সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। কোনো হাউসবোট বা নৌযান যাত্রী সংখ্যার অধিক যাত্রী পরিবহন ও মাছ ধরার যন্ত্র কিংবা সরঞ্জাম বহন করতে পারবে না। নির্ধারিত রুট (পথ) ছাড়া নৌযান চলাচল ও নোঙ্গর করতে পারবে না।
৯. দুযোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পর্যটক পরিবহন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। আকস্মিক ঝড়, প্রবল বৃষ্টিপাত বা বজ্রপাতের আশঙ্কাকালীন পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. টুর অপারেটর ও পর্যটকদের স্থানীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।
১১. হাউসবোটে ও নৌযানে উচ্চস্বরে গান-বাজনাসহ কোনো পার্টির আয়োজন করা যাবে না।
১২. হাউসবোট ও নৌযানের মালিক এবং টুর অপারেটররা তাদের পরিচালিত টুরে শব্দ দূষণকরী অর্থাৎ উচ্চ আওয়াজ সৃষ্টিকারী ইঞ্জিন বা জেনারেটর ব্যবহারকে নিশ্চিতভাবে পরিহার করবে।
১৩. হাউসবোটে ও নৌযানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বহন করতে পারবে না।
১৪. নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বা বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে হাওরে মাছ শিকার করা নিষিদ্ধ।
১৫. যথাযথ কর্তৃপক্ষে অনুমতি ছাড়া হাওরে বালু, পাথর বা মাটি ইজারা প্রদান ও উত্তোলন নিষিদ্ধ।
১৬. শুষ্ক মৌসুমে হাওরের কোনো জলাধারের পানি সম্পূর্ণভাবে নিঃশেষ করা যাবে না।
১৭. টুর অপারেটররা ১০০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের নৌযান বা হাউসবোট পরিচালনা করতে পারবে না।
১৮. হাওর এলাকা-সংশ্লিষ্ট বসতবাড়ি, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তরল ও কঠিন বর্জ্য হাওরে নির্গমন করা যাবে না।
১৯. হাওর অঞ্চলে পাকা সড়ক নির্মাণ পরিহার করতে হবে। তবে, জরুরি বা বিশেষ প্রয়োজনবোধে সড়ক নির্মাণের প্রয়োজন হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে এবং সরকার অনুমোদিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এ ধরনের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে অবশ্যই পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন এবং সামাজিক প্রভাব মূল্যায়ন করতে হবে।
এসব সুরক্ষা আদেশ প্রতিপালন করা বাধ্যতামূলক; আদেশের লঙ্ঘন ‘বাংলাদেশ পানি আইন, ২০১৩’ অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে বলে জানিয়েছে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়।

ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি)