ঈদের ছুটিতে
২৫০ টাকায় ইলিশের রাজ্যে...!!

আচ্ছা, ইলিশ পছন্দ করেন আপনি? যদি করে থাকেন, তবে বলুন তো দেখি, আপনার সামনে একদম তাজা ইলিশের বেশ বড় বড় কয়েক টুকরো ডিম বেশ একটু হলুদ-লবণ আর সামান্য গুঁড়া মরিচ ছিটিয়ে গরম তেল থেকে হালকা বাদামি করে ভেজে নামিয়েছে।
তাহলে ঠিক কতক্ষণ আপনি চুপচাপ বসে থাকতে পারবেন? বা জিভে টলমলে জল চলে আসবে কি না, একটু চেখে দেখতে? আরো যদি হয় সাধ আর সাধ্যের মধ্যে, তবে ঠিক কতক্ষণ আপনি এই ভীষণ প্রিয় আর আজকালকার দিনে প্রায় দুর্লভ খাদ্য না খেয়ে থাকতে পারবেন?
আসলে স্বপ্ন দেখছিলাম এমন লোভনীয় একটা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, এমন করে ইলিশের স্বাদ পেতে চাইলে সবচেয়ে কাছে আছে পদ্মার মাওয়া ঘাট। নদী দেখা, ইলিশ খাওয়া আর সাধ্যের মধ্যে ইলিশ কিনতে তাই এক ছুটির সকালে যেতে পারেন পদ্মার মাওয়া ঘাটে। ধরুন, আপনি বাসা থেকে রিকশায় করে ২০ টাকায় বাসস্ট্যান্ড আর সেখান থেকে মাত্র ১০০ টাকায় রুপালি ইলিশের রাজ্য মাওয়া ঘাটে। তার মানে ১২০ টাকাতেই পৌঁছে যাওয়া যাবে।
কখন যাবেন?
তবে যেতে হবে মাওয়া ঘাটে এবং এই আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে, মানে বর্ষাকালে। কারণ, আমরা সবাই জানি যে বর্ষা হলো ইলিশের মৌসুম। হোক সেটা ইলিশ কিনতে, খেতে বা দুচোখ ভরে দেখতে আর সেই সঙ্গে ঘোলা জলের পদ্মা নদীর বালুচর উপভোগ করতে। তাই যেকোনো কারণেই হোক, এখন বর্ষাকাল, তাই বেরিয়ে পড়তে পারেন কোনো এক সকালে।
ইলিশ খেতে
যদি ইলিশ খেতে চান, তবে মাওয়া ঘাটের মাছের পাইকারি বাজার বা এর আশপাশে ঘুরে কোনো লাভ হবে না। ইলিশ ভাজা, ইলিশের ডিম ভাজা, সঙ্গে বেগুন ভাজা ও নানা রকম ভর্তা দিয়ে গরম গরম ভাত উপভোগ করে উদরপূর্তি করতে চাইলে যেতে হবে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরের ফেরি বা লঞ্চঘাটের কাছে। সেখানে অনেক দোকান রয়েছে এসব পসরা সাজিয়ে, গেলেই নানা প্রলোভনে ডেকে নিতে চাইবে আপনাকে। ঢুকে পড়তে পারেন নিজের রুচি আর ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো দোকানে।
কারণ, এখানে আপনার কাছে মাছের একটি মাঝারি পিস চাইবে ১০০ টাকা । কিন্তু আপনি যদি দরদাম করে খেতে পারেন, তবে ৫০-৬০ টাকাতেই পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দমতো মাছের পিস বা ইলিশের ডিমের একাংশ। যাই খান না কেন, ভাত-ভাজি-ভর্তা বা ডাল, আগে দাম জেনে তারপর খেতে বা দিতে বলবেন। নইলে কিন্তু মাছ ১০০ টাকা, ভাত ৩০ টাকা, ভাজি ৩০ টাকা আর ডাল রাখবে ৫০ টাকা!
ইলিশ কিনতে
এখানে ঠিক সকাল ৭টার মধ্যে মূল পাইকারি আড়তদাররা বসেন তাঁদের ইলিশের বিশাল সমারোহ নিয়ে। সারা রাত ধরে উত্তাল আর খরস্রোতা পদ্মায় জীবন বাজি রেখে ইলিশ ধরেন যে জেলেরা, সূর্যের আল ফুটতে না ফুটতেই তাঁরা চলে আসেন মাওয়া ঘাটে। সেখানেই হয় প্রথম কেনাবেচা।
যাওয়ার উপায়
তবে যেকোনো জায়গা থেকে বাসে বা গাড়িতে গেলে নামতে হবে চৌরাস্তার মোড়ে। নেমে ডানে যেতে হবে পুরাতন ফেরিঘাটের দিকে। দুই বা তিন মিনিট হাঁটলেই পেয়ে যাবেন মাছের মূল আড়তের গলির কাঁচা রাস্তা।
ইলিশের দরদাম
বড় প্রায় দেড় কেজি ওজনের এক হালি মাছ কিনতে গুনতে হবে অন্তত চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা। আর হ্যাঁ, এক হালির কমে ইলিশ মাছ সাধারণত বিক্রি করে না কেউ।
মাঝারি বা এক কেজির নিচের এক হালি ইলিশ কিনতে চাইলে খরচ পরবে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ৫০০ টাকা, তবে দরদাম করে কিনলে দুই হাজারের নিচেই কিনতে পারবেন।
আর ছোট ইলিশের দাম নির্ধারণ করা মুশকিল। যতটুকু দেখেছি, ওগুলোর কেনাবেচা অনেকটা নির্ভর করবে কে কতটা বেশি দামে বিক্রি করতে পারে আর কে কতটা কম দামে কিনতে পারে, দরদাম করে।
যাওয়া-আসা
ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে বাসে যেতে পারবেন মোটামুটি ১০০ টাকাতে। ফিরে আসাতেও খরচ একই রকম ১০০ টাকা। বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসার যাওয়া-আসার রিকশা ভাড়া ২০ টাকা আর ২০ টাকা মোট ৪০ টাকা। ইলিশের আড়ত থেকে ইলিশ খেতে হোটেল যেতে ১০ টাকা। সর্বমোট ২৫০ টাকাতেই রুপালি ইলিশের রাজ্যে...!!