ছুটির দিনে
স্বর্গ প্যালেস

কোনো এক পাহাড়ের দেয়ালে ঝুলে থাকা এমন এক ঘর, যেখানে বসে-শুয়ে বা আঙিনায় দাঁড়িয়ে আপনি একই সঙ্গে পাবেন আপনার ভালোলাগার সব, সবকিছু একই সঙ্গে। ঠিক এমনই স্বর্গীয় এক কটেজ কাশ্মীরের পেহেলগামে, যেখানে অপার্থিব অনেক কিছুই একই সঙ্গে ধরা দিয়েছিল আমাদের হাতে। সব রকমের পাহাড়, ঝর্ণা, অরণ্য, বয়ে চলা নদী, মেঘ-কুয়াশা, রং-বেরঙের ফুল, সবুজ গালিচা, অরণ্যে অরণ্যে ঘোড়ার পাল, নানা রকম ফল।
কেউ পাহাড় ভালোবাসেন, তিনি পাহাড় চাইবেন হয়তো। কিন্তু কেমন পাহাড় চান আপনি? সবুজ? রুক্ষ, অরণ্যে ঘেরা? মেঘে ঢাকা? কুয়াশা মাখা? নাকি বরফে জড়ানো? কোন রকমের পাহাড় পেতে চান আপনি? সব রকমের পাহাড় পাবেন আপনি একে একে সুখের স্বর্গীয় স্বর্গ প্যালেসে বসে বা শুয়ে থেকেই।
কেউ হয়তো পাহাড় ভালোবাসে না তেমন একটা, নদী ভালোবাসেন। পাবেন উত্তাল, খরস্রোতা, পাথরে-পানিতে মাতলামি করা লিডার নদী। যেখানে চুপচাপ বসে থাকতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোনোরকম ব্যস্ততা ছাড়া। চাইলে বসতে পারেন নদীর একদম মাঝখানে কোনো পাথরের ওপরে। তখন কেমন লাগবে বলুন? নদীর মাঝখানে বসে আছেন আপনি, চারদিকে নানা রকম পাহাড়ের দেয়াল, আশপাশে ঝর্ণাধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে পাইনের অরণ্য।
আচ্ছা নদী বা পাহাড় ভালো লাগে না? ঝর্ণা ভালো লাগে বা পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারা, যা নদীতে পতিত হয়? তবে সেটাও পাবেন একটু সামনে ডানে বা বাঁয়ে গেলেই। হয়তো ঘাড়টা একটু উঁচু করতে হবে বা এদিক-সেদিক ঘোরাতে হবে, এই যা।
কারো হয়তো পাহাড়, নদী, ঝর্ণা এসবের চেয়ে বেশি পছন্দ ঘন সবুজ বনানী, তবে তো কথাই নেই। আপনার সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে যেদিকে তাকাবেন আর যাবেন, শুধু বন আর বনানী। যেখানে হেঁটে হেঁটে গভীরে যেতে পারেন নিজের ইচ্ছামতো, তবে অবশ্যই দলবেঁধে অরণ্যের ভেতরে যেতে হবে, কোনো বন্য পশুর আক্রমণ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে।
হেঁটে, বসে বা ঝর্ণায় ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছেন? বা এত ঘোরাঘুরি, হাঁটাহাঁটি করতে মন চাইছে না? তবে ফিরে আসুন স্বর্গ প্যালেসের সবুজ গালিচায়, ওখানে বসে কাটিয়ে দেওয়া যায় কয়েকটি দিন অনায়াসেই। এক মগ গরম কফি হাতে নিয়ে বসতে পারেন স্বর্গ প্যালেসের খোলা ব্যালকনিতে, বারান্দায়, ডাইনিংয়ে, সবুজ গালিচায় বা সেটাও যদি ইচ্ছা না হয়, তবে নিজের রুমে বসেই আপনি উপভোগ করতে পারেন ওপরের সব প্রকৃতি একই সঙ্গে।
কখনো হয়তো মেঘ থেকে ঝিরঝিরে বৃষ্টি নামবে, স্বর্গ প্যালেসের রুমের জানালায় গড়িয়ে পড়বে বৃষ্টির ফোঁটা, দূরের পাহাড়ে ভেসে বেড়াবে মেঘ, অন্য কোনো পাহাড়ে হয়তো হাসবে সূর্য। কখনো বৃষ্টি থেমে গিয়ে খোলা কাচের জানালা দিয়ে ঢুকে পড়বে মেঘ-কুয়াশা আপনাকে আলিঙ্গনে বাঁধতে। আর যখন আকাশ থাকবে ঝকঝকে নীল, দূরের পাহাড়ে ভেসে বেড়াবে সাদা মেঘের ভেলা, জানালার পাশে ফুটে আছে টকটকে লাল গোলাপ, সামনে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের মুগ্ধতা, তখন কাঠের সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে, রুমের বাইরে এসে বসতে পারেন সবুজ আঙিনায়।
একই সঙ্গে এই পাহাড়-অরণ্য-নদী-ঝর্ণা-মেঘ-কুয়াশার এমন অনন্য স্বর্গসুখের অনুভূতি একই জায়গা বসে পেতে চাইলে আপনাকে যেতে হবে পেহেলগামের স্বর্গ প্যালেস গেস্টহাউসে। কয়েকভাবে এখানে যেতে পারেন। বেশ আরামে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে কলকাতা, দিল্লি হয়ে শ্রীনগর গেলেন। শ্রীনগর থেকে পেহেলগাম গাড়িতে।
অথবা ঢাকা থেকে কলকাতা বাস/ট্রেন। কলকাতা থেকে দিল্লি/জম্মু ট্রেন, তার পর নিজেদের ইচ্ছামতো গাড়ি ভাড়া করে সোজা পেহেলগামের স্বর্গ প্যালেস। ভাড়া রুমপ্রতি এক হাজার টাকা মাত্র। আর খাওয়া যে যেভাবে খাবেন। তবে খুব বেশি নয়, ৫০০ টাকাতেই একজনের একদিনের খাবার হয়ে যাবে।