ঘোরাঘুরি
রাজসিক শাটল ট্রেনে

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে (চবি) যেমন রূপসী করে তুলেছে। তেমনি এই ক্যাম্পাসের অন্যতম অংশ শাটল ট্রেনকে করেছে গৌরবান্বিত। এই শাটল ট্রেন বাংলাদেশের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ৫১ বছরে পাল্টেছে অনেক কিছু। পাল্টেছে মানুষ, পাল্টেছে অবস্থা। প্রতিষ্ঠাকালীন যাতায়াতের কোনো সু ব্যবস্থা না থাকলেও ১৪ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয় শাটল ট্রেন। অনেক স্বপ্ন নিয়ে যার চলাচল স্বপ্নের ক্যাম্পাসে। ৩৬ বছর নিয়ম করে চলছে এই স্বপ্ন বহনের যাত্রা। কেন জানি ক্লান্তির লেশ মাত্রও চোখে পড়ে না।
বিশ্বের মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজস্ব ট্রেন ব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে তার একমাত্র দাবিদার চবি। কিছুদিন আগে সানফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শাটল ট্রেন সার্ভিস বন্ধ করে দেয়। এই শাটল ট্রেনকে বলা যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণভোমরা। আর এই শাটল ট্রেনের বগিগুলোর রয়েছে বিচিত্র সব নাম। যেমন : উল্কা, ভিএক্স, সিএফসি, একাকার, এপিটাফ, সাম্পান, কনকর্ড-ইউরেকা, খাইট্টা খা, ককপিট, ফাইটক্লাব, মহাপাপী, সিক্সটি নাইন, অলওয়েজ, বিজয় ইত্যাদি।
যেখানে চলে মজার সব গান যেমন ‘ল ফ্যাকাল্টির মেয়েদের বিয়া করিস না আইনের প্যাচে ফালাই দিব বাঁচতে পারবি না....’ অথবা ‘তুমি থাক লেডিস হলে আমি থাকি শাহ জালালে’।
প্রতিটি বগিতে আছে নিজস্ব বাদক ও গায়কদল। এই খ্যাত-অখ্যাত গায়ক ও বাদকদল প্রতিদিন আসা যাওয়ার সময় ট্রেনের দেয়াল চাপরিয়ে উচ্চস্বরে গান গেয়ে সারা বগি মাতিয়ে রাখে। সর্বোপরি, এসব শাটল সিঙ্গারদের সুরের মূর্ছনায় মুখরিত থাকে শাটল ট্রেন। প্রেমিক-প্রেমিকাদের কথা না বললেই নয়। শাটল ট্রেন হচ্ছে প্রেমিক যুগলদের জন্য নিরাপদ ও অবাধ জায়গা। প্রেমিক-প্রেমিকাদের ক্লাস মিস হলেও শাটল ডেট কখনো মিস হওয়ার নয়। প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা আগেভাগে এসে সিট দখল করে রাখে এবং তার প্রিয়মুখের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকে। পাহাড়ি ও গ্রাম্য আকাবাঁকা পথ বেয়ে হেলেদুলে চলতে থাকা শাটল ট্রেনের দুলুনি এবং শাটল সিঙ্গারদের সুরমূর্ছনায় প্রেমিকযুগলদের পার হয় এক অসাধারণ রোমান্টিক মুহূর্ত।এত ভিড় ও হৈচৈয়ের মধ্যেও এমন কিছু মানুষ আছে ব্যতিক্রম। যাদের কাছে বই একমাত্র সম্বল। এতসব কোলাহলের ভিতরেও যথারীতি গভীর মনোযোগের সাথে বইয়ের পাতায় ডুবে যায়। দেখা যায় এ বিদ্যাসাগররা হচ্ছে বিভিন্ন বিভাগের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান অধিকারী।
সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, আশা, ভালোবাসা শব্দগুলো যেমন একটির বিপরীত অথবা সমার্থক ঠিক তেমনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে শাটল ট্রেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে একই রকম।
প্রতিদিন সকালে নিয়ম করে চাটগাঁ শহরের সদ্য ফোটা স্বপ্নগুলোকে নিয়ে পাহাড়ঘেরা বিদ্যানিকেতনে রেখে যান যাতে স্বপ্নের বাস্তবিক রূপ পাওয়া যায়। স্বপ্ন আনা-নেওয়ার ফেরিওয়ালা স্বপ্ন নিয়ে এত খেলা করলেও এতটুকু অহংকার নেই তার। নীরবে যেন চিৎকার করে বলছে আমি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখী।
কীভাবে আসবেন চবিতে
চট্টগ্রাম শহর থেকে চবিতে আসার মাধ্যম সড়কপথ ও রেলপথ। সড়কপথে চট্টগ্রাম শহর (নিউমার্কেট) থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গামী বিশেষ বাস (তরী) সার্ভিস রয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেইটে (চট্টগ্রাম হাটহাজারী রোড) এসে থামে। তা ছাড়া রেলপথে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুটি ট্রেন প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টা ও ৮টা, দুপুর ২টা ৫০মিনিট ও দুপুর ৩টা ৫০মিনিট, রাত সাড়ে ৮টা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে।
তা ছাড়া ষোলশহর স্টেশন থেকে সকাল ৯টা ৪০ মিনিট এবং ১০টা ৪০ মিনিটে দুটি ট্রেন চবির উদ্দেশে ছেড়ে আসে। প্রতিটি ট্রেনই ষোলশহর স্টেশন হয়ে ক্যাম্পাসে যায়।
যারা ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চান তাদের ঢাকা থেকে প্রথমে চট্টগ্রাম আসতে হবে। সেক্ষেত্রে বিকেল ৩টায় (শুক্রবার ছাড়া) প্রতিদিন সুবর্ণ এক্সপেস চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। তা ছাড়া মহানগর প্রভাতী সকাল ৭টা ৪০মিনিটে, মহানগর এক্সপ্রেস রাত ৯টায়, তুর্ণা এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এ ছাড়া চিটাগং মেইল রাত সাড়ে ১০টায় এবং কর্ণফুলি এক্সপ্রেস (মেইল) সকাল সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এসব ট্রেনের যেকোনো একটিতে করে আপনি চট্টগ্রামে এসে পৌঁছাতে পারেন। (ট্রেনের সময়সূচি বাংলাদেশ রেলওয়ের সাইট থেকে নেওয়া)এরপর আপনি চাইলে উপরে উল্লেখিত শাটল ট্রেনের শিডিউল অনুসারে যেকোনো একটি ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পৌঁছাতে পারেন। আর যাঁরা সড়ক পথে ঢাকা শহর থেকে চট্টগ্রামে আসতে চান তাঁরা ঢাকার যেকোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসে আসতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে যদি নগরীর গরীব উল্লাহ শাহ নামিয়ে দেয় তখন আপনি ওই এলাকা থেকে ৩ নম্বর বাস (তরী) করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ভাড়া গুনতে হবে ১৫-২০টাকা।
থাকার ব্যবস্থা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কোনো সুব্যবস্থা নেই। তবে যদি আপনার কোনো স্বজন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত থাকে সেক্ষেত্রে আপনি হলে অবস্থান করতে পারেন। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে হাটহাজারী পৌরসভায় দুটি হোটেল রয়েছে যেখানে আপনি রাত যাপন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে সিটের মান ভেদে ভাড়ার পার্থক্য হতে পারে।
দর্শনীয় স্থান
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়টি পুরোটাই দর্শনীয় স্থান। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ফরেস্ট্র ইনস্টিটিউট, ভোটানিক্যাল গার্ডেন, নান্দনিক ঝরনা, আর অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য রয়েছে চালন্দাগিরি পথ।