ছুটির দিনে
বুদ্ধ পূর্ণিমায় সবুজবাগ বৌদ্ধবিহারে

আজ থেকে আড়াই হাজারেরও বেশি বছর আগে বর্তমান নেপালের অন্তর্গত কপিলাবস্তু রাজ্যের শাক্য বংশীয় রাজা শুদ্ধধনের ঔরসে রানি মায়াদেবীর গর্ভে লুম্বিনী কাননে সিদ্ধার্থের জন্ম হয়। রাজপুত্র সিদ্ধার্থ মানুষের দুঃখে বেদনার্ত হয়ে মুক্তির উপায় খুঁজতে রাজ প্রাসাদ ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন সত্যের সন্ধানে। বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণের পর অবশেষে তৎকালীন উপমহাদেশের বিহার রাজ্যের গয়ার ফল্গু নদীর তীরে অশ্বত্থ গাছের নিচে বজ্রাসনে বসে কঠোর সাধনায় লাভ করেন বুদ্ধত্ব। পরবর্তী দীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্ম প্রচার করে কুশিনারা মল্লদের শালবনে পরিনির্বাপিত হন। তার জন্ম, বোধিলাভ ও মহাপ্রয়াণ বৈশাখী পূর্ণিমার দিনে হয়েছিল বলে বৈশাখী পূর্ণিমার অন্য নাম দেওয়া হয় ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’। এই ‘বুদ্ধ পূর্ণিমায় আপনি সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাসাবো সবুজবাগ ধর্মরাজী বৌদ্ধ মহাবিহার। আর খরচের কথা নাই বা বললাম, তা সবারই জানা আছে।যা দেখবেন
বাসাবো বৌদ্ধ মহাবিহারে প্রবেশের সাথে সাথে দেখা পাবেন প্রখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী মৃণাল হকের তৈরি গৌতম বৌদ্ধর ভাস্কর্য। এখানে গৌতম বৌদ্ধ আশীর্বাদ প্রদান করছেন। কিছু দূর এগিয়ে গেলে দেখা পাবেন মূল মন্দিরের। মূল মন্দিরে প্রবেশের পর দেখতে পাবেন ধ্যানমগ্ন গৌতম বৌদ্ধ। শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে ধূপকাঠির মহোনীয় গন্ধ। সবাই যে যার মতো পার্থনায় মগ্ন। একপাশে দেখা পাবেন কাঁচের দেয়ালের ভেতর বিভিন্ন রূপে গৌতম বৌদ্ধ । আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলে দেখতে পাবেন শায়িত অবস্থায় গৌতম বৌদ্ধ। এখানে চলছে উপাসনা, সবাই একত্রে বসে উপাসনা করছে। মন্দির থেকে বের হলেই দেখা পাবেন পুকুরে পাড়ে অবস্থিত প্রায় ৩০ ফুট উচ্চতার গৌতম বৌদ্ধ। এখানে পদ্মের ওপর গৌতম বৌদ্ধ, ধ্যান মুদ্রায়। গৌতম বুদ্ধ বিশ্বের মানুষের দুঃখ-বেদনাকে নিজের দুঃখ বলে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন। মানব জীবনের দুঃখ তাঁর দৃষ্টিগোচর হলে তিনি সম্পদ, ঐশ্বর্য তথা সংসার জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন এবং জন্ম, জরা, ব্যাধি ও মৃত্যু- এ চারটির কারণ উদঘাটন এবং মানুষের শান্তিক ও মুক্তির লক্ষ্যে নিমগ্ন হন। বৌদ্ধ ধর্ম কর্মবাদী ধর্ম। এতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মানুষ তার কাজ অনুসারে ফল পাবে। প্রকৃত কর্মসাধনার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক মানুষের পক্ষে বুদ্ধত্ব অর্জন ও নির্বাণ লাভ সম্ভব। মহামতি বুদ্ধ মানুষকে মৈত্রী ভাবনায় ভাবিত হতে বলেছেন। পরের দুঃখে দুঃখী হয়ে, অপরের সুখে সুখী হয়ে, উপেক্ষার মনোভাব নিয়ে জীবনযাপনের উপদেশ দিয়েছেন। বিশ্ব চরাচরে সব সত্তা যেন সুখী হয়, এটাই ছিল বুদ্ধের ঐকান্তিক কামনা।