ঈদের ছুটিতে
রোজ গার্ডেন

আসছে কোরবানির ঈদ। আর ঈদে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায় তা নিশ্চয়ই হিসাব-নিকাশ করে রেখেছেন আপনি। আবার অনেকেই নানাবিধ কারণে শহর ছেড়েও যেতে পারবেন না।
তাই ঢাকার ভিতরে এমন কিছু সুন্দর জায়গা আছে, যেখানে ঘুরে আসতে পারেন। কাটিয়ে আসতে পারেন উপভোগ্য কিছু মুহূর্ত। আর এমনি একটি জায়গা খুব কাছের দূরত্বে রোজ গার্ডেন।
পুরান ঢাকায় যদিও চাপা অলিগলি, হৈ হুল্লোড় আর ব্যস্ততা ও রিকশার জ্যাম, তারপরও কিছু কিছু জায়গা আছে যেগুলোর একটু ভিন্নতা রয়েই গেছে। রোজ গার্ডেন এ রকম একটি জায়গা।
১৯৩১ সালে ঋষিকেশ দাস নামে এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পুরান ঢাকার ঋষিকেশ রোডে ২২ বিঘা জমির ওপর একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন। এক সময়ে বাগানে প্রচুর গোলাপ গাছ থাকায় এর নাম হয় রোজ গার্ডেন। এ ছাড়া বাগানটি সুদৃশ্য ফোয়ারা, পাথরের মূর্তি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো আছে। আপনি চাইলে আসছে ছুটির দিনগুলোতে ঘুরে আসতে পারেন রোজ গার্ডেনে।
ইতিহাস
রাজধানীর পুরান ঢাকার হৃষিকেশ রোডে ব্যক্তি মালিকানাধীন ঐতিহাসিক রোজ গার্ডেন ১৯৮৯ সালে সংরক্ষিত ভবন ঘোষণা করে বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। বর্তমানে এটি পুরাকীর্তি হিসেবে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের যাত্রা শুরু হয়েছিল ওই বাড়িতেই। মুসলিম লীগের প্রগতিশীল একটি অংশের উদ্যোগে বাঙালি জাতির মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ১৯৫৫ সালে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে এ দলের নতুন নাম হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৩১ সালে প্রায় ২২ বিঘা জমির ওপর বাগানবাড়িটি নির্মাণ করেন ব্যবসায়ী হৃষিকেশ দাস। পশ্চিমমুখী ওই দোতলা বাড়ির চারপাশ বিভিন্ন দেশ থেকে আনা দুর্লভ প্রজাতির গোলাপের বাগানে সাজিয়ে তোলেন তিনি। সেই থেকে এর নাম হয় ‘রোজ গার্ডেন। বেহিসাবি জীবনযাপনের কারণে একপর্যায়ে দেউলিয়া হয়ে যান রোজ গার্ডেনের মালিক হৃষিকেশ দাস। ১৯৩৬ সালে ব্যবসায়ী খান বাহাদুর মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছে এ সম্পত্তি বিক্রি করে দেন তিনি। কাজী আবদুর রশীদ সেখানে গড়ে তোলেন প্রভিন্সিয়াল লাইব্রেরি। মৌলভী কাজী আবদুর রশীদের কাছ থেকে ১৯৬৬ সালে রোজ গার্ডেনের মালিকানা পান তার বড় ভাই কাজী মোহাম্মদ বশির(হুমায়ুন) । এর সুবাদে ভবনটি হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি’ নামে পরিচিতি পায়। ১৯৭০ সালে রোজ গার্ডেন প্যালেসের ইজারা নেয় বেঙ্গল স্টুডিও ও মোশন পিকচার্স লিমিটেড। ১৯৯৩ সালে রোজ গার্ডেনের অধিকার ফিরে পান কাজী আবদুর রশিদের মেজ ছেলে কাজী আবদুর রকীব। ১৯৯৫ সালে কাজী রকিবের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী লায়লা রকীব রোজ গার্ডেনের সম্পত্তির মালিক হন। এর নিচতলায় রয়েছে একটি হলরুম, আটটি কক্ষ ও করিন থিয়ান কলাম। ওপর তলায় আরেকটি হলসহ আরো পাঁচটি কক্ষ রয়েছে। প্রাসাদের সামনে বাগানে আছে মার্বেলের তৈরি কয়েকটি সুদৃশ্য মূর্তি। তবে যে গোলাপ বাগানের জন্য বাড়িটির নাম হয়েছিল রোজ গার্ডেন, তা বর্তমানে নিশ্চিহ্ন।
যা দেখবেন
রোজ গার্ডেনের পাশেই আসলে দেখতে পাবেন নয়নাভিরাম দুধ-সাদা ভবনটি। জমিদার ঋষিকেশ দাস নির্মিত এই জলসা-ঘরের সামনে শ্বেত মার্বেলের অনেক মানব মূর্তি আছে। ভেঙ্গেও গেছে কোথাও কোথাও। তারপরও সুন্দর মূর্তিগুলো। ভবনের সামনে বেশ বড়সর আঙিনা। আঙিনার মাঝখানে একটা ফাউন্টেন। এখানেই এক সময় গোলাপ বাগান ছিল। এখন শুধুই সবুজ ঘাস। সবুজ আঙিনার পর একটা পুকুর, সিঁড়িও আছে। পানি খুব একটা স্বচ্ছ না। সিঁড়ির সামনেই লোহার তোরণ। সামনের গোলাপ বাগানটা এখন না থাকলেও প্রাসাদের ঐশ্বর্য এখনো অটুট আছে। বাড়িটির বাম পাশে থাকা কৃষ্ণচূড়া গাছটি বাড়ির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে রেখেছে। গাছটি কৃষ্ণচূড়ায় ছেঁয়ে লাল হয়ে আছে তখন। নিচে পড়ে থাকা ঝরা কৃষ্ণচূড়াগুলো আরো মনোমুগ্ধকর করে রেখেছে। প্রাসাদটি দোতলা বিশিষ্ট। প্রাসাদটির নিচতলায় একটি হলরুম, একটি কোরিনথিয়ান কলাম এবং আটটি কক্ষ রয়েছে। প্রাসাদের উপর তলার মাঝে নৃত্য করার জন্য হল ছাড়াও রয়েছে পাঁচটি কক্ষ।
কীভাবে যাবেন :
ছুটির দিন ছাড়া সবদিনই রোজ গার্ডেনে যাওয়া যায়। তবে মূল ভবনে ঢোকার ক্ষেত্রে পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়। ঢাকার গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ী দিয়ে রিকশায় চড়ে টিকাটুলির কেএম দাস লেনে অবস্থিত রোজ গার্ডেনে যেতে পারেন। তবে রিকশাচালকরা হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি বললেই বেশি চিনবে। বেড়ানোর ফাঁকে খেতে পারেন পুরান ঢাকার আল রাজ্জাক, হাজির বিরিয়ানি, কাস্মীর কাচ্চি, বিউটি বোর্ডিং কিংবা সুলতানের চা।আর ভাড়া মাত্র মতিঝিল থেকে ৩০ টাকা ।