ছুটির দিনে
৭০০ টাকায় লক্ষ্মী প্রতিমার হাটে

ধন ও সৌভাগ্যের দেবী মা লক্ষ্মী। অবাঙালিদের মধ্যে লক্ষ্মীপূজার রেওয়াজ কালীপূজা বা দিওয়ালির দিনে। কিন্তু বাঙালির ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী পূজিতা হন দেবীপক্ষের শেষের পূর্ণিমা তিথিতে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার চল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পূজা হয় মূলত মাটির প্রতিমায়, কিন্তু বাংলাদেশে প্রধানত সরায় এঁকে লক্ষ্মীর পূজা করা হয়। আর এই লক্ষ্মীপূজার কয়েক দিন আগের থেকেই শুরু হয় পূজার আয়োজন।
সিলেট শহরের বন্দর বাজারে বসে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট। সিলেট শহরের আসে পাশের এলাকা থেকে মৃৎ শিল্পীরা প্রতিমা নিয়ে বসেন। আপনি ও চাইলে ঘুরে আসতে পারেন এই হাট থেকে আর খরচের কথা ভাবছেন মাত্র ৭০০ টাকা।
সিলেট শহরের বন্দরবাজারে গেলে দেখতে পবেন মৃৎ শিল্পীরা মূর্তি নিয়ে তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। ভিন্ন ভিন্ন আকৃতির মূর্তির প্রতিটির দাম ২০০ টাকা থেকে পাঁচ হাজার টাকার ভেতর। প্রতিটি স্থানে মানুষের ভিড় লেগেই আছে। গৃহ দেবী লক্ষ্মী বলে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ও আসেন প্রতিমা কিনতে। এর পাশেই দেখতে পাবেন পূজার সামগ্রী নিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছে বিক্রেতারা।
বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর সাপ্তাহিক পূজা করে থাকেন। এই পূজা সাধারণত বাড়ির স্ত্রীলোকেরাই করে থাকেন। "বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা"-য় এই বৃহস্পতিবারের লক্ষ্মীব্রত ও পূজা প্রচলন সম্পর্কে একটি যে লৌকিক গল্পটি রয়েছে, তা এ রকম :
এক দোলপূর্ণিমার রাতে নারদ বৈকুণ্ঠে লক্ষ্মী ও নারায়ণের কাছে গিয়ে মর্ত্যের অধিবাসীদের নানা দুঃখকষ্টের কথা বললেন। লক্ষ্মী মানুষের নিজেদের কুকর্মের ফলকেই এসব দুঃখের কারণ বলে চিহ্নিত করলেন। কিন্তু নারীদের অনুরোধে মানুষের দুঃখকষ্ট ঘোচাতে তিনি মর্ত্যলোকে লক্ষ্মীব্রত প্রচার করতে এলেন। অবন্তী নগরে ধনেশ্বর নামে এক ধনী বণিক বাস করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলেদের মধ্যে বিষয়সম্পত্তি ও অন্যান্য ব্যাপার নিয়ে ঝগড়া চলছিল। ধনেশ্বরের বিধবা পত্নী সেই ঝগড়ায় অতিষ্ঠ হয়ে বনে আত্মহত্যা করতে এসেছিলেন।
লক্ষ্মী তাঁকে লক্ষ্মীব্রত করার উপদেশ দিয়ে ফেরত পাঠালেন। ধনেশ্বরের স্ত্রী নিজের পুত্রবধূদের দিয়ে লক্ষ্মীব্রত করাতেই তাঁদের সংসারের সব দুঃখ ঘুচে গেল। ফলে লক্ষ্মীব্রতের কথা অবন্তী নগরে প্রচারিত হয়ে গেল। একদিন অবন্তীর সধবারা লক্ষ্মীপূজা করছেন, এমন সময় শ্রীনগরের এক যুবক বণিক এসে তাদের ব্রতকে ব্যঙ্গ করল। ফলে লক্ষ্মী তার উপর কুপিত হলেন। সেও সব ধনসম্পত্তি হারিয়ে অবন্তীনগরে ভিক্ষা করতে লাগল। তারপর একদিন সধবাদের লক্ষ্মীপূজা করতে দেখে সে অনুতপ্ত হয়ে লক্ষ্মীর কাছে ক্ষমা চাইল। লক্ষ্মী তাকে ক্ষমা করে তার সব ধনসম্পত্তি ফিরিয়ে দিলেন। এভাবে সমাজে লক্ষ্মীব্রত প্রচলিত হলো।
কীভাবে যাবেন
লক্ষ্মী প্রতিমার হাটে যেতে হলে আপনাকে বাস/ট্রেন করে আসতে হবে সিলেট শহরে। প্রতিদিন ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে বাস/ট্রেন ছাড়ে ভাড়া পড়বে ৩২০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। সিলেট শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে বন্দরবাজার যাব- বললেই আপনাকে নিয়ে যাবে লক্ষ্মী প্রতিমার হাট। রিকশা/সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া নেবে ৩০/৮০ টাকা।