শীতের ছুটিতে
শাপলা বিলের লাল সাগরে একদিন

এ যেন ছোটখাটো এক লাল সাগর। সকাল থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে বিলটি দেখলে এমন মনে হতে পারে আপনার কাছে। উত্তরে সবুজ খাসিয়া-জয়ন্তিয়া পাহাড় আর ঢালুতে ছোট্ট খাসিয়াপল্লী। একটু দক্ষিণে লাল-সবুজের অপূর্ব সমারোহ। তবে লালের আধিক্যই বেশি। লাল-সবুজের এমন মেলবন্ধ দেখতে হলে যেতে হবে ডিবির হাওরের শাপলা বিলে।
নগরজীবনে কর্মব্যস্ততা থেকে মুক্তির জন্য যাঁরা ‘বেরিয়ে পড়ার’ চিন্তাভাবনা করছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট তাঁদের অনেকেরই প্রথম পছন্দ হতে পারে। পর্যটক আকর্ষণের মতো অনেক কিছুই আছে উত্তর-পূর্ব সীমান্তের এই জেলাতে। এবার শীতে যাঁরা সিলেট ভ্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাঁরা শাপলা বিলটাকেও তালিকায় রাখতে পারেন। সিলেটের পর্যটনশিল্পে মাত্র কবছর আগে সংযোজিত জৈন্তাপুর উপজেলার ডিবির হাওরের এই বিলটি। এত দিন লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল। কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যম আর কিছু কিছু গণমাধ্যমের সুবাদে বিলটি এখন পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
যা দেখবেন
সীমান্তের ওপারে ভারতের খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আপনি যখন ডিবির হাওরের কাঁচা রাস্তা দিয়ে এগোতে থাকবেন, তখন আশপাশের ছোটখাটো জলায় দু-একটা লাল শাপলা আপনাকে স্বাগত জানাবে। চলতে চলতে ডানে-বাঁয়ে হঠাৎ চোখে পড়বে গাঁয়ের মেয়ে বা বধূ কলসি কাঁখে আপনমনে চলছে নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
পর্যটকদের জন্য ডিবির হাওর যুবক সমিতির তরুণ-যুবক সদস্যরা হাসিমুখে আপনাকে স্বাগত জানাবেন। তাঁদের কারো নৌকায় চড়ে ঘণ্টা হিসেবে ঘুরতে পারেন এই ছোট্ট সাগরে। দেখবেন হালকা লাল-কালচে ডাঁটার ওপর ঠায় দাঁড়িয়ে একেকটা রক্তরাঙা শাপলা যেন হাসিমুখে মেলে ধরেছে নিজের স্নিগ্ধ রূপ। নিচে গোলাকার সবুজ পাতাও যেন কথা বলে ওঠে, তবে তুমিও এলে! দেখো, আমরা কিন্তু বাংলাদেশের জলপতাকা।
হ্যাঁ, জলের বুকে লাল-সবুজের এমন স্নিগ্ধ সৌন্দর্য আমাদের জাতীয় পতাকার কথা মনে করিয়ে দিতে পারে। বিলের পানি কোথাও লালচে, আবার কোথাও মেঘহীন আকাশের মতো নীল। লাল-সবুজে ভাসতে ভাসতে উত্তর বা পূর্বে তাকালে দেখবেন বিশাল খাসিয়া-জৈয়ন্তিয়া পাহাড়ের সবুজও। ইচ্ছেমতো নৌকা ভ্রমণের ছবি তো আপনি তুলবেনই। ক্যামেরা বা মোবাইল সঙ্গে না থাকলেও অসুবিধা নেই। বুকে ক্যামেরা ঝোলানো ডিবির হাওর যুবক সমিতির দু-তিনজন সদস্যকেও দেখবেন আপনার ইশারার অপেক্ষায় মৃদু হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে। ডেকে নিন, ঝটপট আপনার শাপলা বিল ভ্রমণের স্মৃতিগুলো তারা বন্দি করে ফেলবে। তারপর তা আপনার কাছে পৌঁছেও দেবে নিজ দায়িত্বে।
নৌকা ভ্রমণ শেষে উত্তর দিকে অগ্রসর হলে হাতের ডানে পাবেন বিজিবির একটা চৌকি। তার নিচে চা-বিস্কুটের একটি ছোট দোকানও আছে। পানাহার শেষে ফের মূল সড়কে উঠে আরেকটু উত্তরে এগোলে দেখবেন পাহাড়ের পাদদেশ একটি ছোট খাসিয়াপল্লী। ওটা কিন্তু ভারতীয় অংশ। ওদিকে আর অগ্রসর না হয়ে এখান থেকেই ক্যামেরায় পাহাড়টাকে ধরতে পারেন। দুপুরের পর কিন্তু শাপলা বিলের রং পাল্টাতে থাকে। সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গ ফুলগুলোও আস্তে আস্তে বুঁজে আসে, অনেকটা ঘুমিয়ে পড়ার মতো। আর তাই রংও কিছুটা কমে যায়।
কখন যাবেন
সারা বছর এই বিলে শাপলা থাকলেও শীতের সকালই কিন্তু বিলটি দেখার উপযুক্ত সময়। বছরের অন্য ছয় মাস শাপলা থাকলেও তা তেমন একটা আকর্ষণীয় মনে হয় না।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ-ফকিরাপুল থেকে বাসে সিলেটের কদমতলী পর্যন্ত পৌঁছাতে খরচ পড়বে ৪০০ থেকে হাজার টাকার মধ্যে। ট্রেনে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। বিমানেও যেতে পারেন। সিলেটের কদমতলী থেকে রিকশা বা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নগরীর সুবহানীঘাট যেতে খরচ পড়বে ২৫ থেকে ৫০ টাকা। ওখানে আছে জৈন্তাপুর যাওয়ার বাস ও সিএনজি অটোরিকশা। গেটলক বাসে যেতে খরচ হবে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আর অটোরিকশায় যেতে খরচ পড়বে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে। জৈন্তাপুর বাজার থেকে রিকশা বা অটো নিয়ে ডিবির হাওরে যেতে খরচ হবে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার মতো। তবে আরো কম খরচে যাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। সে ক্ষেত্রে জৈন্তাপুর বাজার থেকে আপনাকে জাফলং বা গোয়াইনঘাটের অটোরিকশায় উঠতে হবে। ড্রাইভার ডিবির হাওরে যাওয়ার রাস্তার মুখে আপনাকে নামিয়ে দেবেন। ভাড়া নেবে মাত্র ১০ টাকা। এই রাস্তা ধরে সোজা উত্তর দিকে ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন শাপলা বিলের তীরে। এখানে রিকশা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। পেলে ভাড়া নেবে ২০ থেকে ২৫ টাকার মতো। রাস্তাটি কাঁচা বলে ভাড়াও একটু বেশি।
সতর্কতা
জৈন্তাপুর বাজারে কিছু কিছু রিকশা বা অটোচালক আছে, যারা পর্যটকদের কাছে অতিরিক্ত টাকা চায়। তেমন কিছু ঘটলে স্থানীয় কারো সহযোগিতা নিতে পারেন। আর খাবার পানি ও হালকা নাশতা জৈন্তাপুর বাজার থেকে সঙ্গে নিয়ে নিতে পারেন। ডিবির হাওরে দু-একটি দোকান থাকলেও আপনার পছন্দের খাবার নাও পেতে পারেন।
যেখানে থাকবেন
সিলেট শহরের বন্দরবাজার জিন্দাবাজার দরগাহ গেট এলাকায় প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে থাকার খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কয়েকটি অভিজাত হোটেলও আছে।