পূজার ছুটিতে
পূজায় শাঁখারীবাজার থেকে তাঁতীবাজার
চারদিকে নানা রকম আলোকসজ্জা। দূর থেকেই ঢোলের শব্দ, তার সঙ্গে উলুধ্বনি এবং নানা গানের আওয়াজ তো আছেই। এখানকার প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই যেন অন্য রকম ব্যস্ততার ছোঁয়া লেগেছে এখন। তবে এ ব্যস্ততা আনন্দের, এ ব্যস্ততা উৎসবকে ঘিরে। দর্শনার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। কারণ, দেখতে হবে সব মণ্ডপ। একই গলিতে এত বেশি মণ্ডপ ঢাকার আর কোথাও আছে কি না, তা হয়তো বা আমাদের জানা নেই। প্রতিটি মণ্ডপ সাজানো হয়েছে ভিন্নতার আলোকে। এখানকার মণ্ডপগুলোর বিশেষত্ব হলো, প্রায় সব মণ্ডপই তৈরি করা হয়েছে রাস্তার ওপর কাঠের মঞ্চ তৈরি করে। তবে এতে সাজসজ্জার কোনো কমতি রাখেনি আয়োজকরা।
বলছি পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার থেকে তাঁতীবাজারের দুর্গাপূজার উৎসব আয়োজনের কথা। কলকাতার মতো সারা ঢাকা শহরেই এই শারদীয় দুর্গোৎসবকে নিয়ে থাকে নানা আয়োজন। তবে সে ক্ষেত্রে শাঁখারীবাজার থেকে তাঁতীবাজারের চিত্রটা যেন একটু বেশিই উৎসবমুখর। পূজার ছুটিতে যাঁরা পূজামণ্ডবে ঘুরবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা এই উৎসবের আমেজে নিজেকে মেশাতে চলে আসতে পারেন শাঁখারীবাজার। শাঁখারীবাজার থেকে তাঁতীবাজার একই গলি হয়ে আপনি দেখে আসতে পারেন ১০টির বেশি দর্শনীয় পূজামণ্ডপ। তার সঙ্গে এখানকার উৎসবময় পরিবেশে কিছুটা আনন্দ গ্রহণ করতে পারেন।
কী কী দেখবেন
আগেই বলেছি, এই স্থানটির বিশেষত্ব হলো এখানে প্রায় ১০টির বেশি পূজামণ্ডপ এবং প্রতিটি মণ্ডপই ভিন্ন ভিন্ন সৌন্দর্যের কথা প্রকাশ করছে। যাঁদের হাতে সময় কম এবং পূজামণ্ডপ ঘোরার ইচ্ছা আছে, তাঁরা স্বল্প সময় হাতে নিয়ে চলে আসতে পারেন শাঁখারীবাজার এবং একই পথ ধরে শাঁখারীবাজার থেকে তাঁতীবাজার পর্যন্ত একসঙ্গে ঘুরে আসতে পারেন অনেক মণ্ডপ।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে শাঁখারীবাজারের পথের চিত্রটা এখন সারা বছরের চেয়ে একেবারেই ভিন্ন। যেদিকে তাকাবেন, শুধু উৎসবের আমেজ। প্রথমে গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই যে চিত্রটি আপনার চোখে পড়বে তা হলো, সারি সারি নানা পসরায় সাজানো দোকানগুলো। এ যেন একেবারেই মেলার চিত্র। রাস্তার দুপাশে সারি বেঁধে তৈরি করা হয়েছে খেলনা, নানা প্রসাধনী, মাটির তৈরি খেলনা, মণ্ডা-মিঠাইসহ নানা খাবারের দোকান। মনে রাখবেন, এখানে অধিকাংশ মণ্ডপই রাস্তার ওপর মঞ্চ তৈরি করে বসানো হয়েছে, তাই রাস্তাটিতে এখন যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। সুতরাং সব মণ্ডপ দেখতে হলে আপনাকে হেঁটেই যেতে হবে। তাই যাওয়ার আগে এখান থেকে কিছু খেয়ে নিতে পারেন, কারণ মণ্ডপগুলো দেখার পথে আর কোনো খাবারের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। এর পর সামনে যেতে যেতে আপনার চোখে দেখা দেবে একেকটি মণ্ডপ। প্রতিটি মণ্ডপেই রয়েছে কোনো না কোনো ভিন্নতার ছোঁয়া।
পথে যেতে প্রথমেই আপনার সামনেই পড়বে শনি দেবের মন্দির। এই মণ্ডপটির এ বছরে ৪৫ বছর পূর্তি। এর পর একই রাস্তায় কিছুদূর পা চলতেই কিছুক্ষণ পরপর দেখতে পাবেন একেকটি মণ্ডপ। একে একে দেখতেন পাবেন নবোবাণী পূজা কমিটির মণ্ডপ, শ্রীশ্রী কালাচাঁদ বিগ্রহ এস্টেট, সূর্য তারা পূজা কমিটির স্থাপিত মণ্ডপ, নতুন কুঁড়ি পূজা কমিটির স্থাপিত মণ্ডপ, নব কল্লোল মণ্ডপ, শঙ্ঘমিত্র পূজা কমিটি স্থাপিত মণ্ডপ।
এ ছাড়া এই মণ্ডপগুলো দেখতে দেখতে আপনি যখন তাঁতীবাজার এলাকায় প্রবেশ করবেন, তখন দেখতে পাবেন শ্রীশ্রী সিদ্ধেশ্বর বাসুদেবের মন্দিরের পাশের মণ্ডপ এবং তাঁতীবাজার পূজা কমিটির উদ্যোগে স্থাপিত মণ্ডপগুলো।
কীভাবে যাবেন
এই মণ্ডপগুলো দেখার জন্য আপনি বিভিন্নভাবে যেতে পারেন। আপনি যেখান থেকেই যেতে চান, এই মণ্ডপগুলো দেখতে হলে সদরঘাটগামী কোনো যানবাহনে উঠতে পারেন। নামতে হবে সদরঘাট বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে বা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। এখানে নেমেই রাস্তার বিপরীত পাশে মণ্ডপের গেট দেখতে পাবেন অথবা কাউকে শাঁখারীবাজারের পূজামণ্ডপগুলোর কথা বললেই আপনাকে দেখিয়ে দেবেন তিনি। এ ছাড়া আপনি গুলিস্তানগামী কোনো গাড়িতে চড়ে গুলিস্তান নামতে পারেন। সেখান থেকে আপনি সদরঘাট বাহাদুর শাহ পার্কের সামনে যাওয়ার অনেক গাড়ি বা রিকশা পারেন। গুলিস্তান থেকে আপনি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে সেখানে পৌঁছাতে পারেন। সে এক অন্য রকম ভালোলাগা। ঘোড়ার গাড়িতে ভাড়া নেবে ৩০ টাকা।
ছবিগুলো তুলেছেন হাবিব উল্লাহ খান