ঈদে ছুটিতে
গন্তব্য কুতুবদিয়া বাতিঘর
মানুষ ঠাসা শহরের চাপে আর থাকতে ইচ্ছা করছে না। ভাবছেন, কোথাও থেকে ঘুরে আসবেন। হাতে যে তালিকাটা আছে, তার প্রায় সবটুকুই দেখা শেষ। এখন নতুন কোনো জায়গার খোঁজে? তো, আর দেরি কেন, এবার ঈদে ঘুরে আসুন কুতুবদিয়া বাতিঘর । কুতুবদিয়া বাতিঘর যাওয়ার আগে জেনে নিন এর আদ্যোপান্ত।
প্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রাম ছিল একটি সমুদ্রবন্দর। খ্রিস্টীয় নয় শতক থেকে আরব বণিকরা চট্টগ্রামের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন করে। বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর (১৪ শতক) থেকে চট্টগ্রাম বন্দর একটি ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বন্দরে পরিণত হয়।
সেকালে সামুদ্রিক জাহাজে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ছিল না, অভিজ্ঞ নাবিকরা প্রাচীন প্রচলিত পদ্ধতিতে সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিতেন। ১৮২২ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলভাগ বিধ্বস্ত করে দেয়। প্লাবনের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় সমুদ্রবক্ষে পলি জমে সৃষ্টি হয় অনেক চর। বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন নতুন চর জেগে ওঠার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে দেশি-বিদেশি জাহাজ চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়।
নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের স্বার্থে ব্রিটিশ সরকার বাতিঘর স্থাপনের জন্য জরিপকাজ পরিচালনা করে এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ২৫ মাইল দক্ষিণে তিন দিকে বঙ্গোপসাগর পরিবেষ্টিত কুতুবদিয়ায় একটি সুউচ্চ বাতিঘর স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়। বঙ্গোপসাগরে চলাচলরত জাহাজকে সংকেত দেখানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ও সামুদ্রিক এলাকায় বিভিন্ন সময় সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজার, নরম্যান্স পয়েন্ট, পতেঙ্গা ও কুতুবদিয়ায় বাতিঘর স্থাপন করা হয়।
এসব বাতিঘরের বিচ্ছুরিত আলো ২৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার গভীর সমুদ্র থেকে দেখা যায়। সবচেয়ে প্রাচীন বাতিঘর স্থাপিত হয় কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায়। পাথরের ভিতের ওপর নির্মিত কুতুবদিয়া বাতিঘরটির উচ্চতা ছিল প্রায় ৪০ মিটার। এর ছয়টি কামরায় পাটাতন ও সিঁড়ি ছিল কাঠের। সর্বোচ্চ কামরায় আট ফিতার ল্যাম্প বসানো হয়েছিল। ল্যাম্পের জ্বালানি ছিল নারকেল তেল। বাতিঘরের নিচতলা ছিল মাটির নিচে এবং এর দেয়াল ছিল খুবই পুরু। আটতলা এ বাতিঘরের প্রতি তলার উচ্চতা ছিল প্রায় পাঁচ মিটার। প্রতি কক্ষে ছিল কাচের জানালা। সর্বোচ্চ কক্ষে জ্বালানো হতো বাতি। একটি কাঠের ফ্রেমে রাখা বাতিটি প্রতিদিন সূর্যাস্তের আগে জ্বালানো হতো। ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন হেয়ারের তত্ত্বাবধানে ও ইঞ্জিনিয়ার জে এইচ টুগুডের নির্দেশনায় কুতুবদিয়ার বাতিঘরটি নির্মিত হয়। দক্ষিণ ধুরং ইউনিয়নের আলী ফকির ভেইলে পশ্চিম সমুদ্র উপকূলে নির্মিত এ বাতিঘর ১৮৯৭ সালের প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; সমগ্র লাইট হাউস নড়বড়ে হয়ে যায়। লাইট হাউসের রক্ষকের বাসভবন বিধ্বস্ত হয়। ভবনের কাঠের মেঝে বাতাসের তীব্রতায় প্রায় ৭০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে। ভবনের টিনের তৈরি ছাদ আশপাশের মাঠে গিয়ে আছড়ে পড়ে। স্তূপাকৃত বড় বড় পাথর পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যায়। ১৯৬০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে স্থায়ী ভাঙনে বিলীন হওয়ার আগপর্যন্ত এ বাতিঘর বিরামহীন আলো দেখিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূর থেকে দিকনির্দেশনা দিত। পুরোনো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে বহু আগে। তবে এখনো ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ কখনো কখনো জেগে উঠতে দেখা যায়। বাতিঘর এলাকায় পরে যে বাতিঘর তৈরি করা হয়েছিল, সেটিই এখন নাবিকদের পথ দেখায়। বড়ঘোপ বাজার থেকে সমুদ্রসৈকত ধরে উত্তর দিকে কিছুদূরে গেলেই বর্তমান বাতিঘরের অবস্থান।
কীভাবে যাবেন
কুতুবদিয়া যেতে হবে কক্সবাজারের বাসে। ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার যায় সোহাগ পরিবহন, টি আর ট্রাভেলস, গ্রিনলাইন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সেন্ট মার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস।
এ ছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন-এসি বাসে যেতে পারেন। এসব বাসে চড়ে নামতে হবে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের পথে, যাত্রাবিরতি স্থল ইনানী রিসোর্টের এক কিলোমিটার সামনে বড়ইতলী মোড়ে। সেখান থেকে সিএনজিচালিত বেবিটেক্সিতে যেতে হবে মাগনামা ঘাট।
মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হতে হবে ইঞ্জিন নৌকা অথবা স্পিডবোটে। ইঞ্জিন নৌকায় সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট। আর স্পিডবোটে লাগে ১০ মিনিট। চ্যানেল পার হলে কুতুবদিয়া।
কোথায় থাকবেন
কুতুবদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য মানসম্মত একমাত্র আবাসন ব্যবস্থা হলো হোটেল সমুদ্রবিলাস। সমুদ্রলাগোয়া এই হোটেলে বসে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের সৌন্দর্য।