ছুটির দিনে
ঘুরে আসুন আলুটিলা গুহা থেকে
মনের পিপাসা মেটাতে কোথায় না ছুটছে মানুষ আজ। কখনো সাদা মেঘের ভেলার সঙ্গে নিজেকে মেশাতে উঁচু পাহাড়ে, কখনো সমুদ্রের বিশালতাকে জানতে সমুদ্রের বুকে, কখনো বা অন্ধকারের অজানাকে জানতে প্রবেশ করছে গভীর গুহায়।
‘গুহা’ শব্দটির সঙ্গে নানা রহস্য জড়িয়ে আছে। কারো কাছে গুহা মানে ভয়ের কিছু, কারো কাছে এটি হলো প্রকৃতির অন্যতম রহস্য।
আমরা হয়তো অনেকেই গুহা সম্পর্কে কিছুটা শুনেছি। স্বভাবতই গুহা অন্ধকার। একবার ভেবে দেখুন তো, কোনো এক অন্ধকার গুহায় আলোক মশাল নিয়ে আলোর যাত্রী হয়ে গুহার মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন আর আপনার পা ছুঁয়ে বয়ে যাচ্ছে শীতল পানির প্রবাহ। কখনো মাথা উঁচু করে, কখনো বা মাথা নিচু করে হেঁটে চলছেন আপনি। তাহলে কেমন লাগবে আপনার, ভাবুন তো। সে এক অদ্ভুত ভালো লাগা। গুহাটি থেকে বের হয়ে আপনার মনে হতে পারে অন্য এক অজানাকে জেনেছেন আপনি।
এমন এক অজানা অনুভূতিকে অনুভব করতে ঘুরে আসতে পারেন খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহা থেকে। তবে সে ক্ষেত্রে জন্তু-জানোয়ারের ভয় নিশ্চয়ই আপনার মনে এসে গেছে। ভাবছেন, গুহা দেখতে চান, কিন্তু গুহায় যদি জন্তু-জানোয়ার থাকে। তাহলে আপনাকে বলা যেতে পারে, আপনি নিশ্চিন্তে ঘুরে আসতে পারেন খাগড়াছড়ির আলুটিলা গুহা থেকে।
পাহাড়ের ভেতরে এই গুহা যেকোনো ভ্রমণপ্রেমীকে আনন্দ দিতে পারে। গুহাটির চারপাশে রয়েছে ঘন সবুজের অরণ্য। গুহাটি ভেতরে ১০০ মিটার দীর্ঘ, ১ দশমিক ৮ মিটার উঁচু এবং শূন্য দশমিক ৯ মিটার প্রশস্ত। পুরো গুহাটি অন্ধকার। গুহাটির একপাশ দিয়ে প্রবেশ করে অন্যপাশে দিয়ে বের হতে সময় লাগতে পারে ১০ থেকে ১৫ মিনিট।
কীভাবে যাবেন
আলুটিলা গুহাটি পাহাড়ি মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। গুহাটিতে প্রবেশের আগেই এর আশপাশের পাহাড়ি মনোরম পরিবেশ আপনার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলতে পারে।
গুহাটি দেখতে হলে আপনাকে প্রথমে যেতে হবে খাগড়াছড়ি সদরে। ঢাকা থেকে শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, রিফাতসহ অসংখ্য বাস প্রতিদিন খাগড়াছড়ি যাতায়াত করে।
ভাড়া ৫২০ টাকা (নন-এসি)। আপনি যদি রাত ১০টা বা তার পর বাসে চড়ে বসেন, তাহলে পরদিন ভোর ৬টার মধ্যে আপনি খাগড়াছড়ি পৌঁছে যাবেন। সকালের নাশতা সেরে রওনা হয়ে যান দর্শনীয় স্থানটি দেখতে। আপনি শান্তি পরিবহনের বাসস্ট্যান্ড থেকে অথবা শাপলা মোড় থেকে আলুটিলা যাওয়ার অনেক গাড়ি পাবেন। তবে মনে রাখবেন, সব ধরনের গাড়ি পাহাড়ি রাস্তা বেয়ে ওপরে উঠতে পারে না। তবে এখানে একধরনের অটোজাতীয় গাড়ি পাওয়া যায়, যেগুলোতে চড়ে আপনি সহজেই চলে যেতে পারেন আলুটিলা গুহায়। সে ক্ষেত্রে পুরো গাড়িটি আপডাউনসহ ভাড়া পড়বে আটশ থেকে হাজার টাকা। খাগড়াছড়ি সদর থেকে আলুটিলা পৌঁছাতে সময় লাগতে পারে ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। গুহাটি এবং তার চারপাশ দেখতে প্রবেশ গেটে আপনাকে টিকেট কাটতে হবে। প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা।
লক্ষণীয় বিষয়
টিকেট কেটে মূল গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই যা আপনার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে তা হলো চারপাশের পরিবেশ। উঁচু পাহাড়ের চারপাশে সবুজের স্বর্গ। পাহাড়ের নিচে দূরে খাগড়াছড়ি সদরটির প্রায় পুরোটাই এখান থেকে দেখা যায়। আপনি যে শহর থেকে আপনার যাত্রা শুরু করেছিলেন, প্রায় ৪০ মিনিট পথ পাড়ি দেওয়ার পর সেই শহরটিকে আবার উঁচু পাহাড়ে দাঁড়িয়ে দেখার অনুভূতি সত্যি অন্য রকম।
গুহাটিতে প্রবেশ করতে হলে প্রথমে আপনাকে বেশ কয়েকটি সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামতে হবে। নামার সময় ভাবতে পারেন যে ওঠার সময় আপনাকে হয়তো এমন অনেক সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হবে। তবে ভয়ের কোনো কারণ নেই, নামার সময় অনেক সিঁড়ি নামতে হলেও ওঠার সময় এত বেশি সিঁড়ি আপনাকে উঠতে হবে না। ওঠার সময় সিঁড়ির সংখ্যা কম। গুহামুখে আপনি মশাল কিনতে পাবেন। প্রয়োজনে দুটি মশাল কিনে নিন। প্রতিটি মশালের দাম ১০ টাকা।
সাবধানতা
১. গুহাটি অন্ধকার এবং চলার পথ উঁচু-নিচু। সুতরাং সাবধানে হাঁটবেন। তবে ভয় নেই, গুহাটি পিচ্ছিল নয়। এখানে কোনো জন্তু-জানোয়ার নেই।
২. একা একা প্রবেশ না করে দলের সঙ্গে প্রবেশ করুন।
৩. একের অধিক মশাল রাখুন। সঙ্গে যাতে একটি নিভে গেলে আরেকটি জ্বালাতে পারেন।
৪. গুহাটি কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু। সুতরাং সাবধানে দেখে চলুন।
৫. বন্ধুদের নিয়ে গুহার ভেতর হৈ-হুল্লোড় না করাটাই ভালো।
৬. গুহাটির ভেতর প্রবেশের সময় সঙ্গে ভারী কিছু রাখবেন না। এতে আপনার চলতে সুবিধা হবে।
৭. মোবাইল ও টাকা সাবধানে রাখুন। নিচে পড়ে যাতে ভিজে না যায়।
৮. গুহার ভেতর কিছু ফেলা থেকে বিরত থাকুন। এতে এর পরিবেশ নষ্ট হতে পারে বা অন্যদের চলাচলে অসুবিধা হতে পারে।