বিজয়ের স্মৃতি
বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে
বহু কষ্টে আর ত্যাগে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। অনেক মানুষ হয়েছিল ঘরছাড়া, অনেকে হারিয়েছিল কাছের মানুষদের। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়ে অ্যালেন গিন্সবার্গ তাঁর সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড কবিতায় বলেন “ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে, যুদ্ধে ছিন্ন ঘরবাড়ি দেশ, মাথার ভিতরে বোমারু বিমান, এই কালোরাত কবে হবে শেষ”
আপনি নিশ্চয়ই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন, জেনেছেন এর ভয়াবহ ধ্বংস যজ্ঞের কথা।একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার উচিত হবে আপনার পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরা। সেক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন দেখতে পেলে এই ইতিহাস আমাদের মনে আরো পরিষ্কার হবে। আপনি যদি স্বচক্ষে মুক্তিযুদ্ধের অনেক দুর্লভ স্মৃতিচিহ্ন, ছবি এবং দলিল দেখতে চান তাহলে ঘুরে আসতে পারেন সেগুন বাগিচার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর থেকে এবং জেনে নিতে পারেন মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত নানা অজানা তথ্য।
যা দেখবেন
জাদুঘরটির নাম মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর হলে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে এমন ভাবে যেন দর্শনার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার আগে প্রাচীন এবং মধ্য যুগের বাংলার ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিতে পারে। জাদুঘরটির নিদর্শনগুলো সাজানো হয়েছে ধারাবাহিক ভাবে। প্রথমে প্রগৈতিহাসিক যুগের কিছু নিদর্শন তারপর ধারাবাহিকভাবে ব্রিটিশ শাসন আমলের নিদর্শন, পাকিস্থানের জন্মের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং সর্বশেষ মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন। প্রথমে যে কক্ষটিতে আপনি প্রবেশ করবেন সেখানে প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন গুলোর মধ্যে রয়েছে সিলেট অঞ্চলের প্রাপ্ত ফসিল,ঢাকা ওয়ারীবটেশ্বর থেকে প্রাপ্ত পাটা, আদি পাল যুগের ভাস্কর্য, প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ। এছাড়া এখানে দেখতে পাবেন ১৮১৪ সালের তালপাতার পুথি ও তৈজসপত্র, বেগম রোকেয়ার হাতে লেখা চিঠি এবং বেশ কয়েকজন সমাজ সংস্কারকদের দুর্লভ ছবি এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, ঢাকার বিখ্যাত মসলিন, স্বদেশী যুগের বিলেতি কাপড় বর্জন আন্দোলন সময়কার সুতিকাপড়, তুলট কাগজে মনসা মঙ্গলের অংশ।
এরপর দেখতে পাবেন ব্রিটিশ শাসন আমলের ইতিহাস, পাকিস্তানের জন্মের ইতিহাসের নানা দলিল এবং চিত্র, ভাষা আন্দোলনের চিত্র, যুক্তফ্রন্টের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত পোশাক ও হাতের লেখা, কলম ও রোমাল, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের শরণার্থী শিবিরের ইতিহাস ও চিত্র, ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র, সুফিয়া কামালের হাতে লেখা ১৯৭১ এর দিনলিপি, জয়বাংলা বেতার কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার সময় দেখতে পাবেন তৎকালীন পোস্টার। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে দুই তলায় দেখতে পাবেন জাতীয় চার নেতাসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধার ব্যবহৃত পোশাক, চশমা, কলমসহ আরো অনেক কিছু। আরো দেখতে পাবেন পাথরের তৈরি বাংলাদেশের মানচিত্র, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের ইতিহাস, বিভিন্ন সেক্টরের কর্মকাণ্ডের, মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র, জয়বাংলা গানের তৎকালীন রেকর্ড। এ ছাড়া যে জিনিসগুলো আপনার মনকে আবেগময় করে তুলবে। তার মধ্যে অন্যতম হলো মিরপুরের মুসলিম বাজার ও জল্লাদ খানার বধ্যভূমি থেকে প্রাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর হাতে নিহত মানুষের মাথার খুলি ও শরীরের অন্যান্য হাড়। এখানে পাক সেনাদের পরিত্যক্ত অস্ত্র এবং গোলার বাক্স রয়েছে। এককথায় মুক্তি যুদ্ধের প্রায় সমগ্র ইতিহাসের একটা ধারণা আপনি এখানে পেয়ে যাবেন। এ ছাড়া এখনে একটি পুস্তক বিক্রয়কেন্দ্রও রয়েছে, যেখান থেকে আপনি চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনেক বই কিনতে পারবেন।
কীভাবে যাবেন
এই জাদুঘরটির অবস্থান ঢাকার সেগুন বাগিচায়। আপনি কাকরাইল শাহবাগ কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে সহজেই রিকশা করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে যেতে পারবেন। জাদুঘরটির প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি পাঁচ টাকা। মনে রাখবেন প্রতি রবিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। রবিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত জাদুঘরটি খোলা থাকে। আরো মনে রাখবেন ভেতরে খাবার ও ব্যাগ নিয়ে প্রবেশ ও ছবি তোলা এবং কোনো নিদর্শনে হাত দেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে আপনি গেটে আপনার ব্যাগ জমা রাখতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে টোকেন নিতে ভুলবেন না।