কালের সাক্ষী জমিদার জয়কুমার দেব রায়ের বাড়ি

অফিসের একঘেয়েমি কাজের মাঝে যখন আপনি বিরক্ত তখন নিজেকে সতেজ করতে ঢাকার আশপাশে ঘুরে আসতে পারেন। একটু ইচ্ছে করলে আপনি ভালো সময় কাটাতে পারেন। ঢাকার আশপাশে এমন সুন্দর কিছু জায়গা আছে যেখানে কম সময়ের মধ্যে আপনি ঘুরে আসতে পারেন, কাটিয়ে আসতে পারেন উপভোগ্য কিছু মুহূর্ত।
আর এমনই একটি জায়গা বুড়িশ্বর গ্রাম। এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার অন্তর্গত বুড়িশ্বর গ্রাম।
বুড়িশ্বর গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি। এখানে মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের এক অপূর্ব সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়—যা এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
এই গ্রামেই রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শন—জমিদার জয়কুমার দেব রায়ের বাড়ি।
স্থানীয়ভাবে যেটি পরিচিত বড়বাড়ি নামে। ধারণা করা হয়, বাড়িটির নির্মাণকাল আনুমানিক ১৮৮০ সালের দিকে। একসময়ের প্রতাপশালী জমিদার জয়কুমার দেব রায় ছিলেন এই অঞ্চলের কর্ণধার। তাঁর স্মৃতি, দানশীলতা ও জনহিতকর কাজ আজও গ্রামের প্রবীণরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
বাড়িটি এখন কিছুটা জরাজীর্ণ হলেও তার স্থাপত্যশৈলী আজও বিস্ময়ে ভরিয়ে তোলে দর্শনার্থীদের। শানবাঁধানো পুকুরঘাট, পাথরে খোদাই করা নকশা, চুন-সুরকির তৈরি মজবুত দেয়াল আর ফুলে ভরা বাগান—সব কিছু মিলে এক ঐতিহাসিক প্রাসাদের রূপ ফুটে ওঠে।
বাড়ির প্রাঙ্গণে রয়েছে উপাসনালয়, যেখানে আগে পূজা সম্পন্ন হতো। মূল ফটকে ছিল চমৎকার নকশা, যা এখন হারিয়ে গেলেও এর ছায়া রয়ে গেছে গ্রামের সাধারণের চোখে।
বাড়িটির সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ একটি কাঠের তৈরি দোতলা ঘর, যা একসময় ছিল তিনতলা। আজও সেই ঘরের কাঠের ছাঁদ, জানালার ফ্রেম আর টিনের ছাউনি যেন ইতিহাসের কণ্ঠস্বর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাশেই রয়েছে একতলা একটি ঘর, যেখানে জমিদার জয়কুমার দেব রায় বাস করতেন। যদিও কিছু আসবাবপত্রের ব্যবহার এখন আর নেই, তবে তাদের অস্তিত্ব মনে করিয়ে দেয় এক সুসময়ের গল্প।

বর্তমানে বাড়িটির দেখাশোনা করেন প্রয়াত শান্তি দেব রায়ের স্ত্রী কল্পনা রাণী দেব রায়। তাঁর সন্তানরাও মাঝে মাঝে এখানে এসে থাকেন। বাড়িটির উত্তর পাশে থাকা দুটো পুকুর আর আশপাশের নিস্তব্ধ পরিবেশ যেন এ স্থানকে করে তুলেছে আরো মোহনীয়।
জয়কুমার দেব রায়ের অবদান শুধু এ বাড়িতেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি গ্রামের ভূমি অফিস, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও খেলার মাঠের জন্য জমি দান করেছিলেন। তার দেওয়া জমিতে সেই ভূমি অফিস আজ দাঁড়িয়ে আছে একটি আধুনিক সেবাকেন্দ্র হিসেবে।
পর্যটকদের জন্য পরামর্শ
জমিদার বাড়িতে থাকার জায়গা না থাকলেও আশপাশে গ্রামের ভেতর ছোটখাটো খাবারের দোকান রয়েছে। সকালেই বেড়িয়ে গিয়ে দিনের মধ্যেই ফিরে আসা যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজ ও সুবিধাজনক। বুড়িশ্বর ঘুরতে গেলে পাওয়া যাবে আরও নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন—পুরোনো মঠ, মন্দির আর বিখ্যাত মাখন ঘোষের বাড়ি।
যেভাবে যাবেন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিশ্বরোড থেকে সিএনজি যোগে বুড়িশ্বর, জনপ্রতি ভাড়া ৬০ টাকা। অথবা হবিগঞ্জের রতনপুর বিশ্বরোড থেকেও একইভাবে যাওয়া যায়, ভাড়াও সমান।