বৈচিত্র্যময় নদী বাঙালি

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে রয়েছে অনেক নদী। এসব নদীগুলোর রয়েছে বাহারি ও নান্দনিক সব নাম। পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মতো বিখ্যাত নদীর পাশাপাশি দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য নান্দনিক নামের নদ-নদী—যেগুলো গড়ে তুলেছে আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি, জীবনধারা ও কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে। তেমনি বৈচিত্র্যময় একটি নদীর নাম বাঙালি। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালি জাতির নামে বাংলাদেশের একমাত্র নদী এটি।
বাঙালি নদীর উৎপত্তি
বাঙালি নদীর মূল উৎপত্তিস্থল তিস্তা নদী। বর্তমানের যমুনা ও তিস্তা নদীর গতিপথ ১৭৮৭ সালের ভয়াবহ বন্যার ফলে তৈরি হয়। এই বন্যা সমগ্র অঞ্চলের নদীভিত্তিক মানচিত্রের ব্যাপক পরিবর্তন করে দেয়। ১৭৮৭ সালের আগে ব্রহ্মপুত্র নদী ময়মনসিংহের ভিতর দিয়ে ভৈরব বাজারে এসে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হত। বন্যার পর, ব্রহ্মপুত্র গতি পরিবর্তন করে এবং যমুনা নামে পদ্মায় পতিত হতে থাকে। তিস্তা নদীও তার গতি পরিবর্তিত করে। ধারণা করা হয় বাঙালি নদীর জন্মও ১৭৮৭ সালের বন্যার পর কেননা বাঙালি নদীর প্রধান উৎস তিস্তা ও যমুনার বর্তমান গতিপথ ১৭৮৭ সালের আগে ছিল না।
নীলফামারী জেলায় এসে তিস্তার ঊর্ধ্বভাগের স্রোতধারা ঘাঘট নামে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালীতে পতিত হয়। সেখান থেকে বাঙালি নাম ধারণ করে গাইবান্ধার আরেক উপজেলা সাঘাটায় প্রবেশ করে। এরপর দক্ষিণ দিকে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলায় দুটি জলধারায় বিভক্ত হয়ে যথাক্রমে সোনাতলা উপজেলার পৌর এলাকাধীন বিশুরপাড়া ও সোনাতলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর দিয়ে বগুড়ায় প্রবেশ করে। বাঙালি নামের জলধারা দুটি সোনাতলা উপজেলার নানা বাঁক পেরিয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলায় দুরন্তপনায় মেতে ওঠে। এখানে নদীটি তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রথম শাখা গাবতলী উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়ন, দ্বিতীয় শাখা গাবতলীর বালিয়াদিঘী ইউনিয়ন এবং তৃতীয় শাখাটি ধুনট উপজেলায় প্রবেশ করে পুনরায় সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রবেশ করে। সারিয়াকান্দি থেকে নদীটি ধুনট উপজেলার দিকে দুই দিক দিয়ে দুটি শাখায় অগ্রসর হয়। এর একটি ধুনটের নিমগাছী ইউনিয়ন, চিকাশী ইউনিয়ন, ধুনট সদর হয়ে সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায় প্রবেশ করে যমুনার উপশাখার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। আর দ্বিতীয় শাখাটি ধুনট উপজেলার নিমগাছী ইউনিয়নের ধামগাছার পশ্চিম পাশ দিয়ে বগুড়া সদরে প্রবেশ করে। তারপর ধুনট উপজেলার এলাঙ্গী ইউনিয়নের বিলচাপরি হয়ে শেরপুর উপজেলার খামারখান্দি ইউনিয়ন, খানপুর ইউনিয়ন অতিক্রম করে বথুয়াবাড়ি নামক জায়গায় হলহলিয়া নদীর সঙ্গে মিশে যায়।
১৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৪৩ মিটার গড় প্রস্থের বাঙালি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ জনপদ।