অপরিকল্পিত লকডাউনে বুভুক্ষদের আহাজারি চলছে : প্রিন্স
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/06/bnp-prince.jpg)
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, সরকারের অপরিকল্পিত চলমান লকডাউনে বাংলাদেশের জনপদে নিরন্ন ও বুভুক্ষ মানুষের আহাজারিতে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ।
প্রিন্স বলেন, লকডাউনে কাজ না থাকায় ছেলে-মেয়েদের মুখে ভাত তুলে না দিতে পেরে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর মুক্তারপুর এলাকায় নিজ বাড়িতে দিনমজুর দ্বীন ইসলাম আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ সরকারের মন্ত্রী-কর্মকর্তারা হরহামেশাই বলে যাচ্ছেন-তারা পর্যাপ্ত ত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন, কেউ না খেয়ে নেই, না খেয়ে মারা যাবে না কেউ, ইত্যাদি ইত্যাদি। মুক্তারপুরে দ্বীন ইসলামের মতো দেশের অগণিত মানুষ এ ধরনের নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি। এই দায় কার? অবশ্যই এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স এসব কথা বলেন।
বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিন্স বলেন, সরকারের অব্যবস্থাপনা, ভ্রান্ত নীতি ও অবহেলা-উদাসীনতায় করোনা চিকিৎসায় যে সংকট দেখা দিয়েছে, অক্সিজেনের অভাবে প্রতিদিনই মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, এই মৃত্যুর দায়ও সরকারকে নিতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের চরম ব্যর্থতায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। জ্যামিতিক হারে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জনগণ এখন দিশেহারা হয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে। একদিকে লাফিয়ে লাফিয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বৃদ্ধি, অপরদিকে সরকারের অপরিকল্পিত, অমানবিক ও নিষ্ঠুর লকডাউনে জনগণ এখন বেগতিক অবস্থার মধ্যে পড়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিএনপি বারবার বলেছে-করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে গণটিকা ছাড়া এই মহামারি মোকাবিলা করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে লাভবান করার জন্য একটি মাত্র উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়ে দেশকে বিপাকে ফেলেছে, জনগণের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলেছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ভুল সিদ্ধান্ত, সময় মতো সঠিক সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ না নেওয়া, অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে অক্ষমতা এবং সার্বিক অদক্ষতা ও অযোগ্যতার জন্য পরিস্থিতি আজ লেজে-গোবরে তথা হযবরল অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা আগেই বলেছি-এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সরকার বারবার সাধারণ ছুটি, বিধিনিষেধ, কঠোর বিধিনিষেধ, লকডাউন, সীমিত লকডাউন, কঠিন লকডাউন দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের অভাবে এসব পদক্ষেপ কার্যকর হচ্ছে না, বরং জনগণের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক তথা জনগণকে সম্পৃক্ত করা ছাড়া কোনো পদক্ষেপই সফল হয় না। লকডাউনে সমাজের যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়-অর্থাৎ নিম্ন আয়ের দিন আনে দিন খায় মানুষ, বেকার-কর্মহীন মানুষের দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ছাড়া এসব পদক্ষেপ কার্যকর হয় না। যার ফলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব তো হচ্ছেই না, বরং জনগণের জীবন বিপন্ন হচ্ছে, মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে।
প্রিন্স বলেন, দিন আনে দিন খাওয়া মানুষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে নিদারুণ কষ্ট করছে। অর্ধাহারে-অনাহারে থেকে মানবেতর অবস্থায় দিন যাপন করছে। খাদ্য ও অর্থাভাবে ক্ষুধার তাড়নায় লকডাউনে মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে, অন্যদিকে রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে এবং জরিমানার শিকার হচ্ছে। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে আমরা এক হীরক রাজ্যে বসবাস করছি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অভিযোগ করে বলেন, সরকার করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে সহায়তার নামে যে বরাদ্দ দিয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তা জনগণের সঙ্গে তামাশা করা ছাড়া কিছুই নয়। ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত যে কয়বার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা কোনো সময় মাথাপিছু ১১ পয়সা, কিংবা ১৪ গ্রাম চাল। বর্তমানেও চলমান লকডাউনে যে বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে তা মাথাপিছু সাত দিনের হিসাবে ১৩ টাকারও কম। এখন বলা হচ্ছে ঈদের আগে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে, তাহলে ঈদের আগ পর্যন্ত এই লকডাউনে মানুষ কী খেয়ে বাঁচবে? প্রকৃত অর্থে, এই বরাদ্দও এখন পর্যন্ত ছাড় হয়নি এবং তা জনগণের হাতে পৌঁছায়নি।
বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, জনগণের এই চরম দুঃসময়ে বিএনপি জনগণের পক্ষে কথা বলার কারণে সরকারের লিপ সার্ভিস দেওয়া মন্ত্রীরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আবার জেলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। জনগণকে রক্ষা না করে, সারাদিন বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অসত্য বয়ান আর জেল-জুলুমের হুমকি দিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার হীন প্রচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা। বেগম খালেদা জিয়া এখনও মুক্ত নন, তিনি কার্যত এখনও বন্দি। বিভিন্ন শর্তের বেড়াজালে তাঁর সুচিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। বারবার জেল জুলুমের ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে জনগণের পক্ষে কথা বলা থেকে বিরত রাখা যাবে না। এই চরম দুর্দিনেও সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। ময়মনসিংহ, বাগেরহাট, চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে।