অবসরের দেড় বছরেও সাইদুরের ভাগ্যে জোটেনি পেনশন
অবসরের দেড় বছর পার হলেও ভাগ্যে জোটেনি পেনশন সুবিধা। জীবনের শেষ সময়ে এসে এমন পরিস্থিতিতে একটি জরাজীর্ণ বাড়িতে পরিবার নিয়ে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছেন। তিনি মোংলা বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী মো. সাইদুর রহমান।
সাইদুরের অভিযোগ, বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তদের অসহযোগিতা ও হয়রানির কারণে এখনও তিনি পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তা ছাড়া তিনি পেনশন সুবিধা পাওয়ার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করলেও নানা জটিলতায় ফাইলবন্দি হয়ে রয়েছে তার আবেদনটিও।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জানা যায়, ১৯৮৫ সালের ৯ জুন মোংলা বন্দরে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে চাকরিতে যোগদান করেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার পেড়িখালী এলাকার মো. সাইদুর রহমান। ২০১০ সালে নিরাপত্তা হাবিলদার হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পেনশন স্কিম চালু হওয়ার পর ১৯৯৬ সালে ১৭ জানুয়ারি কর্মচারী প্রবিধানমালা ১৯৯৫-এর ৭(১) (খ) ধারার বিধান মতে, অবসর ভাতা ও অবসরজনিত সুবিধা পাওয়ার জন্য ঘোষণাপত্র জমা দেন। এরপর অবসর জনিত সুবিধা পাওয়ার জন্য লিখিত আবেদনের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে অবসর গ্রহণের পর বন্দর কর্মচারী সাইদুর রহমানকে গ্র্যাচুইটিভুক্ত কর্মচারী হিসেবে গণ্য করে গত ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রশাসনিক আদেশ (২৩৫৭) জারি করা হয়। এরপর আদেশ মোতাবেক তাকে অবসরোত্তর দেনা-পাওনাদি পরিশোধ করা হয়।
অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাইদুর রহমান বলেন, ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রবিধানমালা ও ঘোষণাপত্র মোতাবেক তিনি অবসর ভাতা ও অবসরজনিত সুবিধা পাওয়ার যোগ্য হওয়া সত্ত্বেও বন্দরের প্রশাসন বিভাগের ভুল তথ্য উপস্থাপনের কারণে তাকে গ্রাচুইটিভুক্ত কর্মচারী হিসেবে পাওনা পরিশোধ করা হয়। এ কারণে পেনশনের পরিবর্তে গ্র্যাচুইটি প্রদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট বন্দরের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করেন তিনি। ওই আবেদনটি নথি উপস্থাপন করা হলে অর্থ ও হিসাব বিভাগ এবং নিরীক্ষা বিভাগের নথির আলোকে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী সাইদুর রহমানকে গ্র্যাচুইটি হিসেবে দেওয়া অর্থ সমন্বয় করে অবশিষ্ট অর্থসহ পেনশন প্রদানের সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রশাসন বিভাগের কর্মশাখা তাদের ভুল ঢাকার জন্য তার দাখিলকৃত আবেদনে অপ্রাসঙ্গিক নানা তথ্য উপস্থাপন করে তাকে হয়রানি করতে থাকে।
সাইদুর রহমান আরও বলেন, ‘কর্মচারীদের পেনশন চালু হওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ গ্র্যাচুইটিভুক্ত কর্মচারীদের তালিকা তৈরি করে। সেই তালিকায়ও তার নাম নেই। কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন হিসাবরক্ষক (আয়) চলতি দায়িত্ব হিসেবে কর্মরত মহিউদ্দিনের হয়রানি ও প্রশাসন বিভাগের ভুলের কারণে আজ আমি পেনশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে শেষ সময়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। তিনি অভিযোগ করেন, তার দাখিলকৃত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব হয়ে হিসাবরক্ষক মহিউদ্দিন তাকে নানাভাবে হয়রানি করতে থাকেন।
মহিউদ্দিন হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা (বেতন) থাকাকালীন দুর্নীতির মাধ্যমে মাস্টার পাইলট আবু আবদুল্লাহকে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা অতিরিক্ত টিএডিএ প্রদান করেন। যা তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তখন তাকে বরখাস্ত করা হয়।
সাইদুর আক্ষেপ করে বলেন, ‘৩৪ বছর চাকরি করে গত দেড় বছরেরও বেশি সময় আগে অবসর গ্রহণ করেছি। চলার কোনো উপায় নাই, টাকার অভাবে নিজের যেমন চিকিৎসা করাতে পারছি না। তাই জরাজীর্ণ ভাঙ্গা বাড়িতে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বসবাস করছি।’
বন্দরের অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী সাইদুর রহমানের স্ত্রী চঞ্চলা রহমান বলেন, ‘অর্থাভাবে স্বামীর চিকিৎসা করাতে পারছি না। এক ছেলে, এক মেয়ে এখনও বেকার। এমতবস্থায়, স্বামীর পেনশন না পেলে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাবে আমার ছেলেমেয়ের জীবন। আর জীবনের শেষ সময়ে আমরাও মানবেতর জীবন পার করছি।’
স্বামীর প্রাপ্য টাকা পেতে তিনি মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মহোদয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) শাহীনুল আলম বলেন, ‘অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী সাইদুর রহমানের বিষয়টি তিনি বন্দরের সব নিয়মকানুন মেনে মানবিক বিবেচনায় দ্রুত সমাধান করবেন। কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে সেটিও দূর করে সমাধান করা হবে।’