ইউএনওর মানবিকতায় শিশু মাকসুদার নতুন জীবন
নেত্রকোনার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মানবিকতায় নতুন জীবন পেল অগ্নিদগ্ধ শিশু মাকসুদা। সে জেলার মদন পৌরসভার বাড়ীভাদেরা এলাকার সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে।
অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর জীবনযুদ্ধে লড়াই করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৪৩ দিন চিকিৎসার পর বাড়ি ফিরেছে শিশুটি।
জানা যায়, দেয়াশলাই দিয়ে খেলনা পুতুলের শাড়ির সুতা পোড়ানোর সময় শরীরে থাকা জামায় আগুন লেগে গিয়ে দগ্ধ হয় মাকসুদা। মুহূর্তের মধ্যেই পুড়ে যায় সমস্ত শরীর। অসহায় পরিবারের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য না থাকায় স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করে ১৫ দিন বাড়িতে রাখায় শরীরের সমস্ত জায়গায় পচন ধরেছিল তার। এভাবেই মরতে বসেছিল শিশুটি।
এ খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারেন মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ। তাৎক্ষণিক ছুটে যান তিনি এবং তার চিকিৎসার সব দায়িত্ব নেন।
অগ্নিদগ্ধ মাকসুদাকে অ্যাম্বুলেন্স করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ৪৩ দিন চিকিৎসার পর জীবন ফিরে অনেকটা সুস্থ হয়ে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে মাকসুদা।
গত রোববার বিকেলে মাকসুদাকে দেখতে তার গ্রামের বাড়ি পৌরসভার বাড়িভাদেরায় ছুটে যান ইউএনও বুলবুল আহমেদ। এ সময় উপজেলা করোনা স্বেচ্ছাসেবক গ্রুপের সমন্বয়ক সাংবাদিক আব্দুল আওয়াল উপস্থিত ছিলেন।
মাকসুদার মা জাফরিন আক্তার বলেন, ‘আমার মেয়ে ঘরেই পচে মরতে ছিল। ডাক্তার দেখাবার কোনো সামর্থ ছিল না আমরার। বড় স্যার আমার মেয়েরে ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর পর নতুন জীবন আবার ফিরা পাইছে।’
অসহায়ত্বের কথা স্বীকার করে বাবা সিদ্দিক মিয়া বলেন, ‘আমি দিনমজুর, দিনে আইনে দিনে খাই। আমার মেয়ের যে অসুস্থ হয়েছিল ঢাকা নিয়ে ডাক্তার দেখাইবার ক্ষমতা আমার ছিল না। আমার মেয়ে ভালো হইছে। আগের মতো এহন খেলতে পারবে। স্যারের কাছে আমি ঋণী। এই উপকার কোনোদিন ভুলতে পারব না।’
মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘শিশু মাকসুদাকে সুস্থ করতে শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কয়েকবার অপারেশন করতে হয়েছে। তার জন্য রক্তের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। ফলোআপের জন্য আগামী ২১ মে মাকসুদাকে আবার ঢাকায় পাঠাতে হবে।’
ইউএনও আরও বলেন, ‘ঢাকায় মাকসুদার চিকিৎসার বিষয়ে সব সময় পাশে সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলেন মদন উপজেলার বাসিন্দা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা রাজেশ বৈশ্য।’
ইউএনও বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসার পর মাকসুদাকে দেখতে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। সে এখন মোটামুটি সুস্থ এবং ভালো আছে। যদি আরও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় তাহলে উপজেলা প্রশাসন তার ব্যয়ভার গ্রহণ করবে।’
তবে মাকসুদার চিকিৎসার ব্যাপারে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন তাদের তিনি ধন্যবাদ জানান।