আইএসের প্রতীকী টুপি কোথায় পেল আসামিরা?
গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা মামলার রায় ঘোষণা উপলক্ষে আট আসামিকে আজ বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে হাজিরের সময় আসামিদের মুখে হাসি ছিল। এর পরে তাদের আদালতের হাজতখানায় কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। তবে আসামিদের আদালতের হাজিরের সময় তাদের মাথায় কোনো ধরনের টুপি দেখা যায়নি।
এরপর দুপুর ১২টার পর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান হলি আর্টিজানের মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। একই সঙ্গে তাদের ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়।
এরপর আদালতের এজলাসে আসামিদের কাঠগড়ায় থাকা আসামি জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের লোগোযুক্ত কালো টুপি পরে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে ধ্বনি দেয়। একই সময় আসামি রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও মো. শরিফুল ইসলাম খালেদ একই ধরনের টুপি পরে। এরপর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় মো. আবদুস সবুর খান নামের আসামি এক আইনজীবীকে হত্যার হুমকি দেয়।
এই টুপি দেখে উপস্থিত আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। এত কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে কীভাবে আসামিরা এই টুপি পেল, তা নিয়ে সবার মধ্যে কৌতূহল দেখা দিয়েছে।
এমন টুপি তারা কোথায় পেল? বেসরকারি একটি টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু বলেন, ‘টুপি নিয়ে আমি বলতে পারব না। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। কীভাবে আইএসের মতো করে এমন প্রতীকী টুপি সংগ্রহ করল? টুপি পরা কোনো অন্যায় নয়, মুসলমান হিসেবে টুপি পরার অধিকার সবার আছে। কিন্তু ফিতাসহ সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর প্রতীকী কালো রঙের টুপি সে কখন-কীভাবে সংগ্রহ করল, তা খতিয়ে দেখা দরকার। জেলখানা থেকে আসার পর হাজতখানায় ছিল। কোন পর্যায়ে এটি সংগ্রহ করা হয়েছে, তা এখন বলা যাচ্ছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার জেল সুপার মাহবুব ইসলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জঙ্গিদের যখন জেল থেকে বের করা হয়, তখন তাদের কাছে আইএসের কোনো ধরনের টুপি ছিল না। একজন বের হয়েছে গোল সাদা টুপি পরিহিত অবস্থায়। বাকি সাতজনের কাছে কোনো অবস্থাতেই টুপি ছিল না। দায়িত্বরত অফিসাররা তাদেরকে পূর্ণ তল্লাশি সম্পন্ন করে প্রিজনভ্যানে তুলেছেন। আমাদের কাছে সিসিটিভির ফুটেজ এবং ভিডিও ফুটেজ আছে। চাইলে আপনি দেখবে পারেন।’
তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন জেল থেকে বের করার পর তাদের কাছে টুপি দেওয়া হয়েছে—এমন প্রশ্নে মাহবুব ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই তাই।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার ও আদালতের পুলিশের প্রধান (ডিসি) জাফর হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘জেল থেকে বের হওয়ার সময় যদি তাদের কাছে কোনো ধরনের টুপি না থাকে, তাহলে তারা আইএসের টুপি পেল কীভাবে? সেই কীভাবেই তদন্ত করে খুঁজে বের করা হবে। আমরা সেই চেষ্টাই করছি।’
এদিকে এ ব্যাপারে আজ আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আজ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘একজন আসামি কীভাবে আইএসের টুপি পরে কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে আদালতে এলো, তা তদন্ত করা হবে। বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখব।’
হলি আর্টিজান হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলো রাকিবুল হাসান রিগ্যান, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে রাজীব গান্ধী, মো. আবদুস সবুর খান, মো. আসলাম হোসেন র্যাশ, মো. হাদিসুর রহমান সাগর, মো. শরিফুল ইসলাম খালেদ ও মামুনুর রশিদ রিপন। খালাস পাওয়া আসামি হলো মো. মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।
মামলার শুনানি শেষে গত ১৭ নভেম্বর মামলার রায়ের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। গত বছরের ২৬ নভেম্বর মামলাটির বিচার শুরু হয়েছিল ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালে। এর আগে গত বছরের ২৩ জুলাই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর গুলশান হামলা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে ২১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে আটজন আসামি ঘটনার পর বিভিন্ন অভিযানে এবং পাঁচজন হলি আর্টিজানে অভিযানের সময় নিহত হয়। বাকি আট আসামির উপস্থিতিতে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

নিজস্ব প্রতিবেদক