আতাউস সামাদ স্মৃতি পুরস্কার পেলেন রয়টার্সের রফিকুর রহমান

প্রথমবারের মতো আতাউস সামাদ স্মৃতি পুরস্কার-২০২১ পেয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ফটোসাংবাদিক এ বি এম রফিকুর রহমান। আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ আয়োজিত স্মরণ সভায় রফিকুর রহমানকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
খ্যাতিমান ফটোসাংবাদিক রফিকুর রহমানের কাজের গুরুত্ব ও মর্যাদা বিবেচনায় তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। তিনি ৪০ বছর ধরে রয়টার্সে কর্মরত। বাংলাদেশের ফটোসাংবাদিক হিসেবে রফিকুর রহমানই প্রথম পেলেন এই স্বীকৃতি ও সম্মাননা। আর প্রথমবারের মতো আতাউস সামাদ স্মৃতি পরিষদ তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান করে।
দীর্ঘ ৫১ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে রফিকুর রহমান ক্যামেরাবন্দি করেছেন দেশে ও বিদেশের অজস্র সব ঘটনাপুঞ্জ। আর রাজনৈতিক বাঁকবদল, উত্থান-পতন, আন্দোলন, প্রলয়ঙ্করী ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা বিষয়ে তোলা তাঁর স্থিরচিত্র এবং ভিডিও পাঠক-দর্শকের সংবাদক্ষুধা নিবৃত্ত করেছে।
স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা এবং দেশের স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্য খুবই জরুরি। আতাউস সামাদ সাংবাদিকদের সেই ঐক্যের জন্য কাজ করে গেছেন।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে আতাউস সামাদ যেভাবে সাংবাদিকদের ঐক্যের জন্য কাজ করেছেন তা পরবর্তী সময়ে ধরে রাখা যায়নি। সাংবাদিক আতাউস সামাদ বিবিসি, এনটিভি, আমার দেশসহ দেশ-বিদেশের অনেক গণমাধ্যমে দায়িত্বশীল পদে সুনামের সঙ্গে কাজ করেছেন।

আতাউস সামাদের প্রতি স্মৃতিচারণা করে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমাদের সবারই স্মরণে আছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় তিনি পাকিস্তান অবজারভারের সংবাদদাতা ছিলেন। কিন্তু তিনি আরেকটা বড় কাজ করেছিলেন। সেটা হচ্ছে, শেখ মুজিবুর রহমানের চিঠি মওলানা ভাসানীর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ ছিল। এই যে কাজ, এটা তো অন্য কোনো সাংবাদিক করতে পারলেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আরও বলেন, ‘এ রকম ঘটনা একজন সাংবাদিকের জীবনে সবসময় আসে না। আমরা তাঁকে দেখেছি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়, একাত্তরের যুদ্ধের সময় এবং এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি কারাভোগ করেছেন। এটা ঐতিহাসিক ঘটনা।’
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আতাউস সামাদ যখন একটি রিপোর্ট কনসেপ্ট করতেন, সেটি ডেলিভারি না হওয়া পর্যন্ত তিনি শান্তি পেতেন না। কিছুতেই শান্ত হতেন না। মাঝেমধ্যে ফোন করলে তিনি এক ঘণ্টার মতো কথা বলতেন। এর কারণ হচ্ছে, তিনি সেখানে খবরটা বের করতে চান এবং বের করতেন।
আজকের পত্রিকার সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, আতাউস সামাদ সত্যের ওপর ভিত্তি করে সাংবাদিকতা করেছেন। তিনি সবদিক থেকে তথ্যকেই মর্যাদা দিয়েছেন। তিনি ছিলেন সত্যান্বেষী। এটাই তাঁর সবচেয়ে বড় চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং কবি হাসান হাফিজের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান, কবি হেলাল হাফিজ, বিএফইউজে মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, দি নিউনেশন সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, দি ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ, সাংবাদিক মুন্নী সাহা, এ কে এম মহসিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে আতাউস সামাদের স্মৃতির উদ্দেশে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি হেলাল হাফিজ।