আমদানি হুঁশিয়ারির পরও বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ
দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ কমাতে ভারত থেকে আমদানির হুঁশিয়ারি দেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তাঁর এই হুঁশিয়ারির পরও বাড়ছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। যদিও কিছু সময়ের জন্য কমতে শুরু করেছিল দামও, স্বস্তিতে ছিলেন দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা। কিন্তু, হুঁশিয়ারির বেশ কয়েক দিন পার হলেও মেলেনি আমদানির অনুমতি (আইপি)। ফলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বাড়িয়ে দিচ্ছেন দেশি পেঁয়াজের দাম। এতে অতিষ্ঠ ক্রেতাসাধারণ।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারকরা জানান, দুই মাসের অধিক সময় ধরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় গত ঈদের পর থেকে বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম একটু একটু করে বাড়তে থাকে। প্রতিদিন ২/১ টাকা করে বেড়ে আজ মঙ্গলবার (১৬ মে) ঠেকেছে ৭০ টাকায়। গত ঈদের আগেও এই পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি হয়। এই সময়ে কেজিতে বেড়েছে অন্তত ৪০ টাকা।
হিলি বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘পেঁয়াজের দামের এই অস্থিরতা তিন সপ্তাহ ধরে শুরু হয়েছে। বাজারে ক্রেতারা পেঁয়াজ কিনতে এলে দাম নিয়ে আমাদের সঙ্গে প্রায় সময়ই কথা কাটাকাটি হচ্ছে। এমনিতে গরমে কাহিল অবস্থা, এরপর পেঁয়াজের দাম শুনে ক্রেতারা চটে উঠছেন। আমরা যে দামে কিনি কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা লাভে বিক্রি করি। বর্তমানে ৭০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।’
ক্রেতা মাহফুজ আলম বলেন, ‘শুধু আমি না, সব মানুষই দাম শুনে উচ্চবাচ্য করছে। আজ বাজারে এলে বলে এক দাম, পরের দিনই আরেক দাম। আমরাও তো খেটে খাওয়া মানুষ। আয় তো বাড়েনি। কিন্তু প্রতিনিয়ত জিনিসপত্র বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। কে শুনে কার কথা?’
পাইকারি বিক্রেতা ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘আমরা পাবনাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে দেশি পেঁয়াজ কিনে আনি। সব খরচ বাদ দিয়ে কেজিতে দুই টাকা লাভে বিক্রি করছি। আজ সকাল ও দুপুরে ৬৩ থেকে ৬৪ টাকায় বিক্রি করছি। আমাদের কাছ থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনে ৭০ টাকা দরে বিক্রি করছে।’
বন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক মোবারক হোসেন বলেন, ‘বাজার পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আমদানিকারকরা সরকারের কৃষি, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছি। কিন্তু কোনো সদুত্তর পাচ্ছি না। আমরা ১০-১২ দিন আগে আমদানির অনুমতি চেয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। এখনও অনুমতির অপেক্ষায় আছি।’
পেঁয়াজের আরেক আমদানিকারক শহীদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী এবং কৃষি সচিব ইঙ্গিত বা ঘোষণা দিয়েছিলেন এভাবে দাম বাড়তে থাকলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। ঠিক তখনই বাজারে দাম কমতে শুরু করেছিল। যখন এই অসাধু ব্যবসায়ীরা দেখল আমদানির অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, আবার তারা দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। আমদানির কথা মুখে মুখে থাকায় তারা সুযোগ নিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা না হলে বাজার সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। আরও অস্থির হতে পারে পেঁয়াজের বাজার।’
এদিকে হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপসহকারী সংগনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, দেশের কৃষকদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে কৃষি মন্ত্রণালয় গত ১৫ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানিতে অনুমতি (আইপি) দিয়েছিল। এরপর ১৬ মার্চ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ আছে।
গত ১১ মে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাজারে পেঁয়াজের দাম অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে অনেক বেড়েছে। দাম যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হবে। দেশীয় পেঁয়াজ উৎপাদন পর্যাপ্ত হওয়ায় আমদানি কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাজার পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যদি দাম বাড়তে থাকে তাহলে আমদানি করা হবে।’