‘আমার মৃত্যুর বিচার চাই’
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউতে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন গৃহবধূ জ্যোতি আগরওয়াল। আজ রোববার সকাল ১১টার দিকে মারা যান তিনি। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে অতিরিক্ত ঘুমের ট্যাবলেট সেবনে অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতি। তাঁর মৃত্যুর পর একটি চিঠি সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে ঘোরাফেরা করছে। সেটি জ্যোতির বলে দাবি করা হচ্ছে। যেখানে লেখা আছে, ‘আমি আমার মৃত্যুর বিচার চাই।’ যদিও ওই চিঠিতে ‘উড়ো চিঠি’ বলে দাবি করে জ্যোতির স্বামী সুমিত আগরওয়াল বলেছেন, তাঁর স্ত্রীর হাতের লেখার সঙ্গে চিঠির লেখার কোনো মিল নেই। অবশ্য জ্যোতির মৃত্যুর পর তাঁর শ্বশুড়বাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছে।
জানা গেছে, নীলফামারী সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া এলাকার সুমিত কুমার আগরওয়ালের স্ত্রী জ্যোতি ঘুমের ওষুধ সেবন করলে তাঁকে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। বাড়িতে চিকিৎসা দেন তাঁর দেবরের স্ত্রী ডা. অমৃতা আগরওয়াল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পরের দিন শুক্রবার বিকেলে নেওয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
জ্যোতির মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাসতে থাকে একটি চিরকুট। যেটা সেখানে জ্যোতির বলে দাবি করা হয়েছে। ওই চিরকুটে জ্যোতি তাঁর মৃত্যুর জন্য শাশুড়ি, স্বামী, দেবর ও দেবরের স্ত্রীকে দায়ী করেছেন।
চিরকুটে লেখা আছে—‘২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর বিয়ের পর থেকে আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল শাশুড়ি উমা দেবী। দেবরের বিয়ের সময় নেওয়া গহনা ও টাকা আজও ফেরত দেয়নি। চাইতে গেলে সবাই আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করত।’
এর আগে একবার নয়, চার চার বার জ্যোতিকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে চিরকুটে লেখা হয়, ‘ভাগ্যক্রমে বেঁচে আছি আমি। এরা কোনোদিন আমাকে সুখের দিন দেখতে দেয়নি। এরা বলতে, সুমিত আমার স্বামী, উমা দেবী আমার শাশুড়ি, আমার দেবর অমিত, আমার জা ডা. অমৃতা কুমারী। আমার মৃত্যুর জন্য এই চারজন দায়ী।’
চিঠিতে জ্যোতি লেখেন, ‘আমি আমার মৃত্যুর বিচার চাই।’
চিরকুটে আরও লেখা রয়েছে, ‘আমার বাবা-মা নেই। ভাইবোনদের জন্য আমি এতদিন বেঁচে ছিলাম। আজ ২১ বছর ধরে আমি কানছি (কাঁদছি)।’
জ্যোতির স্বামী সুমিত কুমার আগরওয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওই চিঠিকে ‘উড়ো চিঠি’ বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘যে চিঠির কথা বলা হচ্ছে—এটি তাঁর (জ্যোতি আগরওয়াল) লেখা নয়। তার হাতের লেখার সঙ্গে এটির মিল নেই।’
জানা গেছে, জ্যোতি আগরওয়ালের বাবার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। আর সুমিত আগরওয়াল সৈয়দপুর হিন্দু কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে, ঘটনার পর থেকে সুমিতের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। তবে, এখনো কেউ লিখিতভাবে জানায়নি। থানায় জানানো হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’