আয়েশি ও বিলাসী প্রকল্প না নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/11/07/pm_0.jpg)
গ্রামীণ কল্যাণমুখী প্রকল্প নিয়ে আপস করা হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা বলেছেন, আয়েশি-বিলাসী প্রকল্প নেওয়া যাবে না। বড় প্রকল্প গ্রহণের আগে গভীরভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করতে হবে। তবে গ্রামীণ ছোট ছোট ও কল্যাণমুখী প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রাখার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এ নিয়ে আপস করা যাবে না।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আজ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন।
সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এসব তথ্য তুলে ধরেন। একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী মন্দা চলছে। অপচয় কমানোর পাশাপাশি মিতব্যয়ী হতে হবে। বড় বড় প্রকল্প নেওয়া যাবে না। বড় প্রকল্প গ্রহণে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি গভীরভাবে দেখতে হবে।
এমএ মান্নান বলেন, দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অনাবাদি জমি খুঁজে বের করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সচিব যেন জেলাপ্রশাসকদের সহায়তা নিয়ে এসব অনাবাদি জমি খুঁজে বের করে আবাদযোগ্য করে গড়ে তোলেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সকলকে মিতব্যয়ী হওয়ার পাশাপাশি অপচয় বন্ধের নির্দেশ প্রদান করেছেন। একইসঙ্গে বিলাসী পণ্যসামগ্রী এড়িয়ে চলা, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও তহবিলের অপব্যবহার রোধ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমিষ ও প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মুরগি, গবাদি পশু ও শাকসবজির উৎপাদন বাড়ানোর ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বলেছেন। কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে, যাতে আমরা স্বনির্ভর হতে পারি। এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না।
মান্নান বলেন, আক্ষরিক অর্থে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ থেকে বেরিয়ে এসেছে, কিন্তু আমরা এখন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী তাই ডেঙ্গু জ্বরের প্রার্দুভাব কমাতে বাসা-বাড়ি ও অফিস-আঙিনা পরিষ্কার রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও দেশবাসীকে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মান্নান বলেন, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি। পৃথিবীর সকল দেশ মন্দার সম্মুখীন হচ্ছে এবং আরও একটি অর্থনৈতিক মন্দার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। বাংলাদেশ ছোট দেশ হওয়ায় এর প্রভাব আমাদের ওপর বেশি পড়ছে।’
বাংলাদেশ বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হচ্ছে। এর সঙ্গে সমন্বয় করে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও অন্যান্য সংস্থা আমাদের ভালো অবস্থার পূর্বাভাস দিচ্ছে। দেশে মূল্যস্ফীতি এখন নিম্নমুখী রয়েছে, আমাদের এই অবস্থা দৃঢ়ভাবে ধরে রাখতে হবে এবং সামনের দিকে এগুতে হবে।’
বিদেশি বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ, রপ্তানি আয় এবং এলসি খোলার সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তুলে ধরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকে কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে। তবে, এটি সত্য নয় যে, আমরা বড় কোনো সংকট বা কোনো বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছি। বিদেশি বিনিয়োগ, রেমিটেন্স প্রবাহ ও রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে আমরা সামনের দিকে এগুচ্ছি।’
সম্প্রতি আকু পেমেন্টের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার যে রিজার্ভ রয়েছে-তা দিয়ে সাড়ে চার মাসের আমদানি বিল মেটানো যাবে।
আজকের একনেক সভায় ৩ হাজার ৯৮১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয় সম্বলিত ৭টি প্রকল্প অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৩৯২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, বৈদেশিক অর্থায়ন ৩২২ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ২৬৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সভায় কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সভার কার্যক্রমে অংশ নেন।
সভায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজির মুখ্য সমন্বয়ক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।