ঈদে ছুটি মেলেনি সুন্দরবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
ঈদুল ফিতরের ছুটি মিলেনি সুন্দরবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। প্রত্যেক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ঈদে সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ, স্টেশন ও টহল ফাঁড়িতেই থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা। সেইসঙ্গে পূর্বের তুলনায় বনের অভ্যন্তরে টহল আরও বেশি জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বনজ সম্পদ রক্ষায়।
ছুটির আগের দিন গত মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) শেষ অফিস দিবসে এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সুন্দবরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সুতরাং ১৮ এপ্রিল থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত কেউই নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না। তাই তাদের ঈদ করতে হবে পরিবারবিহীন নির্জন বনাঞ্চলে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় (বাগেরহাট) বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন জানান, পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে রয়েছে দুটি রেঞ্জ, যার একটি হলো চাঁদপাই আর অপরটি হলো শরণখোলা। আর এই দুই রেঞ্জ কার্যালয়ের আওতায় রয়েছে সাতটি স্টেশন ও ৩৪টি টহল ফাঁড়ি। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিশাল এলাকাজুড়ে মোট জনবল রয়েছে ৩০০ জন। যেখানে পদ ও চাহিদা রয়েছে ৫১৬ জনের। তাই চাহিদার তুলনায় কম জনবল দিয়েই পাহারা দিতে হচ্ছে বিশাল বনাঞ্চলের। ফলে যেকোনো ছুটির দিনে দুর্বৃত্তরা বনের সম্পদ লুটপাট ও ধ্বংসের সুযোগ-সন্ধানী থাকেন। যার কারণে এ বছরও সুন্দরবনের অভ্যন্তরের সব ফরেস্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদুল ফিতরের ছুটি বাতিল করে নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া স্বাভাবিকের তুলনায় ছুটিকালীন টহল জোরদারের পাশাপাশি কঠোর নজরদারিরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছুটিকালীন কোনো দুর্বৃত্ত যাতে বনের অভ্যন্তরে ঢুকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড না করতে পারে সেজন্য চাঁদপাই রেঞ্জে সাতটি ও শরণখোলা রেঞ্জে আটটি অত্যাধুনিক দ্রুতগামী স্পিডবোট এবং ফাইবার বোট প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কাঠের তৈরি ট্রলার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা তো রয়েছেই।
বন কর্মকর্তা বেলায়েত বলেন, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। কিন্তু শুধু বনবিভাগ সেসব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। দুর্গম ও ভয়ঙ্কর বনাঞ্চলে সার্বক্ষণিক জীবন বাজি রেখে ডিউটি করতে হয় বনপ্রহরীদের। বেতন ছাড়া অন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। দীর্ঘদিন ধরে বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দাবি করে এলেও তার মধ্যে গত ২০১৭ সালে শুধু ঝুঁকিভাতাটি চালু হয়েছে। আর সুন্দরবন সুরক্ষার প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরে দুই রেঞ্জে দুজন চিকিৎসক দেওয়া হয়েছে, যারা এপ্রিল মাস থেকেই নির্দিষ্ট সময়ে রেঞ্জের বিভিন্ন স্টেশন ও টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসাসেবা দেবেন। তবে রেশনসহ অন্য সব সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির দাবি গত আট থেকে ১০ বছর ধরে ঝুলেই রয়েছে। তার পরও বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সার্বক্ষণিক জীবন বাজি রেখে সুন্দরবনকে রক্ষায় নিরলস দায়িত্ব পালন করে চলেছেন বলে জানান এই বন কর্মকর্তা।
মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন আরও বলেন, সব সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন আর বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বনজ সম্পদ রক্ষার তাগিদে বনের গহীনে নির্জনে পরিবারবিহীন ঈদ করবেন।