একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখিয়ে ৩৭ জনের কাছে স্ট্যাম্প
জাকির হোসেন। তিনি কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানার ২ নম্বর মানিকাচর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। জাকির পোর্ট থেকে কম দামে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নেন। এভাবে তিনি ৬০০ থেকে ৭০০ জনের কাছ থেকে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখিয়ে ৩৭ জনের নিকট স্ট্যাম্প করে বিক্রি করেছেন।
এ অভিযোগে জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তার করার দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে তিনি এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জাকির হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও ২০টি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মুগদা থানায় একটি প্রতারণার মামলা রুজু হয়। মামলাটি গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগ ছায়াতদন্ত শুরু করে।
তদন্তকালে জানা যায়, গ্রেপ্তার হওয়া জাকির চেয়ারম্যান পোর্ট থেকে স্বল্প দামে গাড়ি কিনে দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিতেন। পরে ওই গাড়ি রেন্ট-এ কারের মাধ্যমে মাসিক ভাড়ায় পরিচালনা করার জন্য চুক্তি করতেন।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘জাকির হোসেন একই গাড়ির বিপরীতে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে ভুয়া কাগজপত্র দ্বারা চুক্তি সম্পাদন করেন। এ ছাড়া একই রেজিস্ট্রিশন নম্বর সম্বলিত গাড়ি একাধিক ব্যক্তির নিকট জাল দলিলের মাধ্যমে বিক্রয় করতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শুধু ইঞ্জিন নম্বর ও চেসিস নম্বর দিয়ে গাড়ি বিক্রির চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। গাড়িটি নিজেই ভাড়া নিয়ে মাসিক ভাড়া পরিশোধের ভিত্তিতে পরিচলনা করার কথা বলে কিছুদিন ভাড়া পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন ও গাড়ি কেনার টাকা আত্মসাৎ করেন। এ ছাড়াও আগের বিক্রয়কৃত গাড়ি স্বল্প মূল্যে মালিকানা হস্তান্তরের লোভ দেখিয়েও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।’
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ‘গত ২১ সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখ কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের তেজগাঁও জোনাল টিম। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মাইক্রো বাস উদ্ধার করা হয়েছে। পরে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও ২০টি আত্মসাৎ করা মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।’
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, ‘প্রতারক জাকির প্রতারণার মাধ্যমে ৬০ থেকে ৭০ টি গাড়ি দেখিয়ে বিভিন্ন পেশাজীবী ৬০০ থেকে ৭০০ জনের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। যাদের মধ্যে ব্যবসায়ী, সরকারী কর্মকর্তা ও সরকারের সংসদ সদস্যরাও রয়েছেন। একটি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর দেখিয়ে ৩৭ জনের নিকট স্ট্যাম্প করে বিক্রি করেছেন।’
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া জাকির পাঁচ থেকে ছয় জনের সহযোগীতায় প্রতারণা করতেন। তিনি আনুমানিক হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। মুন্সীগঞ্জ, বিক্রমপুরে একটি গ্রামে লোকদের কাছে ১২২টি গাড়ি বিক্রির কথা বলে প্রতারণা করেছেন। জাকির হোসেন তার প্রতিষ্ঠান আর. কে. মটরস-এর নামে এবং তাঁর আত্মীয় স্বজনের নামে ২৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তার নামে বিভিন্ন থানায় ১২টি প্রতারণার মামলাও রয়েছে।’