এবার বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নিয়ে কাটাখালি পৌর মেয়রের অডিও ফাঁস
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন ইসলাম শরিয়া সম্মত নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. আব্বাস আলী।
নিজের ঘনিষ্টজনের আলাপচারিতায় এমন মন্তব্য সংক্রান্ত মেয়র মো. আব্বাস আলীর একটি অডিও ফাঁস হলে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে তাঁর এই অবস্থানের কথা জানা গেছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রবেশমুখ সিটি গেটে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করে মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে তিনি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন।
তবে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অনিল কুমার সরকার বলেছেন, ‘মেয়রের অডিওটি তিনি শুনেছেন। বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে অ্যাকশনে নেওয়া হবে।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশন সংলগ্ন কাটাখালি পৌরসভার মেয়র মো. আব্বাস আলী পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগেরও সদস্য। তাঁর এক মিনিট ৫১ সেকেন্ডের অডিওটি মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
অডিওটিতে মেয়র বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন করলে তাঁর পাপ হবে। মানুষকে সন্তুষ্ট করতে যাইয়া আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেন।
আজ মঙ্গলবার অডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীর ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দেওয়া হয় কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কাটাখালি পৌরসভায় গিয়েও তাঁর দেখা পাওয়া যায়নি। ফলে অডিওতে তাঁর মন্তব্য নিয়ে আব্বাস আলীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে একটি গণমাধ্যমের কাছে অডিওটি তার নয় বলে দাবি করে পুরো ঘটনা অস্বীকার করেছেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘মুর্যাল করা যাবে না, মুর্যাল করলে পাপ হবে। আমার সঙ্গে এ ধরনের কারো কোনো কথা হয়নি।’
এদিকে, কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগের অনেকের সঙ্গে কথা বললে তারা অডিওর বক্তব্য মেয়রেরই কণ্ঠ বলে দাবি করেছেন। তবে মেয়রের অডিওটি কোন সময়ের বা কাদের সঙ্গে আলাপচারিতায় তিনি এমন মন্তব্য করেছেন সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
দলীয় সূত্রমতে, আব্বাস আলী ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে প্রথমবার কাটাখালি পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন।
এদিকে, মেয়র আব্বাসের এমন মন্তব্যে রাজশাহীর আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ফেসবুকেও মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে দলীয় ব্যবস্থাসহ আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি করেছেন অনেকেই।
রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, ‘মেয়র আব্বাস যদি এ ধরনের কথা বলেই থাকেন, তবে তিনি দলে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করবে আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করবে, এটা মেনে নেওয়া যাবে না।’
মেয়র আব্বাস আলীর ফাঁস হওয়া অডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করলে তার আওয়ামী লীগ করার অধিকার থাকে না।’ অনিল কুমার আরও বলেন, ‘অডিওটি আমি শুনেছি। মেয়র আব্বাসের অডিওর বিষয়ে আমরা অ্যাকশনে যাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা কেন্দ্রের সঙ্গেও কথা বলেছি। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি। মেয়র আব্বাসের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেটি তারা জানাবেন।’
মেয়র আব্বাস আলী দল থেকে বহিষ্কার হতে পারেন কিনা জানতে চাইলে অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘এটি কেন্দ্র থেকেই নিশ্চিত করা হবে। তবে আমি এবং জেলার সেক্রেটারি কথা বলে কেন্দ্রকে বিষয়টি জানিয়েছি। এখন কেন্দ্র থেকে কী জানাচ্ছে, সেটির জন্য একটু অপেক্ষা করতে হবে।’