‘ওরা আমাগো ছবি ছাপছিল’ বলেই ২ সাংবাদিককে মারধর করল হাসপাতালের দালালরা
নারায়ণগঞ্জ ১০০ শয্যা বিশিষ্ট ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। রোগীদের উত্ত্যক্ত করার ছবি তোলার কারণেই সাংবাদিকদের ওপর এই হামলা চালিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা। হামলার সময় দালালদের মধ্যে একজন বলেন, ‘ওরাই আমাগো পত্রিকায় ছবি ছাপছিল, নিউজ করছিল, ওগরে ধর।’
আজ সোমবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ২টার দিকে নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় জাহিদ নামে এক দালালকে আটক করেছে পুলিশ।
আহত দুই সাংবাদিক হলেন—ডিবিসি নিউজের নারায়ণগঞ্জের ক্যামেরাপার্সন আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি আবির শিকদার।
ওই দুই সাংবাদিকের অভিযোগ, হামলার সময় বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে, স্থানীয় থানা পুলিশে ফোন করে সহায়তা চাইলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের রুমে দালালদের আশ্রয় দেওয়া হয়। এমনকি, তাদের কৌশলে পালিয়ে যেতে সহায়তা করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগী দেখছিলেন চিকিৎসক বিপুল হাসান নাজমুল। এ সময় এক দালাল সিরিয়াল ভঙ্গ করে টাকার বিনিময়ে এক রোগীকে তার চেম্বারে প্রবেশ করিয়ে দেয়। এজন্য অপেক্ষারত অন্য রোগীদের সঙ্গে দালালদের বাগবিতণ্ডা হয়। আর সেই ঘটনার ছবি তুলতে গিয়েই দালালদের মারধরের শিকার হন দুই সাংবাদিক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাসপাতালে নিযুক্ত রয়েছে একাধিক দালাল। এরা সবাই বেতনভুক্ত। আজ দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা ও মারধরের ঘটনার পর সবাই পালিয়ে গেলেও জাহিদ নামে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
হামলার শিকার ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি আবির শিকদার এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ও ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপার্সন হাসপাতালের ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়েছিলাম। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে উপস্থিত হলে সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা এক নারীকে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দালাল চক্র হয়রানি করছিল। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দালালরা রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করছে। আমি সেই ঘটনার ছবি তুললে তারা আমার দিকে তেড়ে আসে। পরে নিজেকে গণমাধ্যমকর্মী পরিচয় দেওয়ার পরে তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এ সময় আমার সঙ্গে থাকা সাংবাদিক মামুন প্রতিবাদ করলে প্রথমে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় দালাল চক্র।’
ডিবিসি নিউজের ক্যামেরাপার্সন আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘একটি ছবি তোলার কারণে তারা আমাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। তারা জরুরি বিভাগের সমানে আমাকে রক্তাক্ত করেছে। কিন্তু, হাসপাতালের কেউ এগিয়ে আসেনি আমাকে বাঁচাতে। হাসপাতালের ডাক্তারদের সঙ্গে মিলেই দালালরা এখানে কাজ করছে।’
বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান বলেন, ‘সাংবাদিকের ওপর হামলার খবর পাওয়া মাত্র আমি থানায় ফোন করে পুলিশ পাঠিয়েছি। ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের সমস্ত অর্জনগুলো দালালচক্রের কারণে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। দালালচক্রের সঙ্গে হাসপাতালের কেউ জড়িত নয়, এটা বলা যাবে না। অভিযোগ দিলে, অবশ্যই এই বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিছুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের ভেতরে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা নেক্কারজনক। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’