কিশোরগঞ্জে ধান কাটা শুরু তবু হাসি নেই কৃষকের মুখে
কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার একমাত্র ফসল বোরো ধান কাটা শুরু হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই। গত ৪ এপ্রিল টানা সাড়ে তিন ঘণ্টার গরম ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। এ সময় তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে। এতে জেলার প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধানের সবে বের হওয়া শীষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চিটায় পরিণত হয়। বছরের একমাত্র ফসল নষ্ট হওয়ায় অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে ভারক্রান্ত কৃষকদের মন।
করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. তাজউদ্দিন এক গুচ্ছ ধান দেখিয়ে বলেন, ‘হিট ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে এ এলাকায় প্রায় ৬০ ভাগ ফসল নষ্ট হয়ে চিটায় পরিণত হওয়ায় কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৬৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ওই দিন টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা গরম ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়ায় প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান চিটায় পরিণত হয়েছে।
করিমগঞ্জের হাওর এলাকার চং নোয়াগাঁও গ্রামের কৃষক আতা ইলাহি বলেন, ‘ধার ও ঋণ করে আমরা বোরো চাষ করি। এ বছর ফসল ভালো হওয়ায় আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে সব ফসল নষ্ট হয়ে গেল। এখন আমি পরিবার নিয়ে খাব কী আর ঋণই শোধ করব কীভাবে।’
কৃষক আব্দুর রশীদ বলেন, ‘আমাদের একটাই ফসল। কিন্তু গরম বাতাসের কারণে আমাদের অর্ধেক ফসলও উঠাতে পারব কিনা জানি না। এখন আমরা কিভাবে জীবন বাঁচাব।’
করিমগঞ্জের সুতারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ বলেন, ‘সরকার যদি এ এলাকার কৃষকদের সহায়তায় ভিজিএফসহ অন্য কার্যক্রম গ্রহণ করে তবেই তাদের একটা উপায় হবে। না হলে তারা কোথায় যাবে, কীভাবেই বা বেঁচে থাকবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম জানান, খবর পেয়ে এরই মধ্যে ঢাকা থেকে এসে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালকসহ কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। তাঁদের নির্দেশক্রমে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণসহ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পরবর্তীতে সে তালিকার ভিত্তিতে কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’