কৃষকরা দুশ্চিন্তায়, ধান কাটতে নেমেছে নানা পেশার মানুষ
মৌলভীবাজারের হাওরে বোরো ধানের ফলন ভালো হওয়ায় একযোগে ধান কাটতে নেমেছে সবাই। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ছাত্র, স্কাউট সদস্য, বেকার যুবকসহ নানা পেশার মানুষ ধান কাটতে মাঠে নেমেছে। চলমান করোনাভাইরাসে শ্রমিক সংকট, ঝড়-বৃষ্টি ও আগাম বন্যার আশঙ্কায় কৃষকরা রয়েছেন আতঙ্কিত ও দুশ্চিন্তায়। তবে এক সপ্তাহ সময় পেলে স্থানীয় কৃষকরা মাঠের পুরো ধান ঘরে তুলতে পারবে বলে আশাবাদী।
করোনা পরিস্থিতি ও মৌলভীবাজার জেলা লকডাউন থাকায় বাইরে থেকে কোনো লোক প্রবেশ করতে পারছে না। এতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান তোলায় এ জেলায় কৃষিশ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এ বছর ভিন্নতা রয়েছে। ধান কাটায় নেমেছে নানা পেশার মানুষ। কেউ ধান ঘরে তুলতে সাহায্য করছে, আবার কেউ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতেও মাঠে নেমেছে।
ধান কেটে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে কাস্তে হাতে নেমেছে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন, পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, পৌর মেয়র মো. ফজলুর রহমান, মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারীসহ আরো অনেকেই।
হাকালুকি হাওরের ভুকশিমইল এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, নানা পেশার মানুষকে ধান কাটতে। এ সময় সুলতান আহমদ নামের এক স্কুলশিক্ষককে ধান কাটতে দেখা যায়। তিনি কুলাউড়া উপজেলার রবিরবাজার ইছাছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকট সৃষ্টি ও পাশাপাশি স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে নিজের জমিতে ধান কাটতে নেমেছেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে গ্রামে অনেক মানুষ তার মূল পেশায় যেতে পারছে না। হাওরে উৎপাদিত ধান কাটতে কর্মহীনরা নেমে পড়লে ধান মাঠে পড়ে থাকবে না।
ভুকশিমইল এলাকায় কৃষক, ক্ষুদ্র কাপড় ও কসমেটিক্স ব্যবসায়ী সিরাজ আহমদ জানান, প্রায় এক মাস ধরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখন কর্মহীন। হাতে এখন খরচ করার মতো কোনো টাকা নেই। তাই নিজের বর্গা দেওয়া জমির ধান নিজে কাটতে এসেছেন। সিরাজ আহমদ জানান, খরা ও খাল খননের কারণে প্রয়োজনীয় সেচ না দিতে পারায় তাঁর জমিতে ফলন কম হয়েছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান বলেন, ‘দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে লকডাউন থাকার কারণে বাইরের শ্রমিকরা বোরোধান কাটতে আসতে পারছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে মৌলভীবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকে কাউন্সিলর ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে কাউয়াদীঘি হাওরে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আহ্বানে আমরা অসহায় ও দরিদ্র কৃষকের ধান কাটার উদ্যোগ নিয়েছি। পাশাপাশি শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে পারছিল না, তাই জুড়ী উপজেলার কৃষকদের অনুপ্রেরণা জোগাতে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।’
রাজনগর ফতেহপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নকূল চন্দ্র দাস বলেন, লকডাউনের কারণে বাইরের শ্রমিক না আসায় অন্তেহরী গ্রামে আরো লোকজন নিয়ে তিনি নিজেই ধান কেটে কৃষকের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চলতি বছর বোরো আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাওরের নিম্নাঞ্চলে আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৭৫৪ হেক্টর জমি। ইতিমধ্যে ৪৮ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। চা শ্রমিকসহ নানা পেশার বেকার যুবকরা ধান কাটতে মাঠে নেমেছে। করোনা পরিস্থিতিতে বাইরে থেকে শ্রমিক আনার প্রয়োজন হবে না। বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যেই হাওরের ধান ঘরে তোলা সম্ভব। আউশ, আমন ও বোরো ধান মিলিয়ে জেলায় প্রতি বছর প্রায় দুই লাখ ৯৬ হাজার ৬২৭ হেক্টর জমি আবাদ হয়ে থাকে। আউশ মৌসুমে এ জেলায় অনেক জমি অনাবাদি থাকে। চলতি আউশ মৌসুমে আমরা স্থানীয় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে চাষের আওতা বৃদ্ধির জোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’
স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন, যে কোনো সময় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় এলাকার বেকার যুবকরা এগিয়ে এলে মাঠ থেকে দ্রুত পাকা ধান ঘরে তোলা সম্ভব। এ ছাড়া তারা ধানের ন্যায্য মূল্যেরও দাবি করেন।