গাজীপুরে বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ
গাজীপুরে বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকরা কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকা-গাজীপুর সড়ক অবরোধ করে রাখে। এ সময় এলাকাবাসী ও ওই রুটের যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানায়, স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানার শ্রমিকরা গত মে মাসের বেতন ভাতাসহ গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের শতকরা ৭০ ভাগের মধ্যে ৫৩ ভাগ বেতন এবং বাৎসরিক ছুটি পাওনা রয়েছে। তারা গত কয়েকদিন ধরে এসব পাওনাদি পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাতে কোনো সাড়া দেয়নি। গতকাল বুধবার মালিক কারখানায় এলেও শ্রমিকদের পাওনাদি পরিশোধের বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়ে চলে যান। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধর ও স্থানীয়রা জানায়, স্টাইল ক্র্যাফ্ট পোশাক কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় আসে। তারা কাজে যোগ না দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করে। এ সময় শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে ও গেইটে অবস্থান নিয়ে তাদের মে মাসের পূর্ণ বেতন ভাতাসহ গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের পাওনা ৫৩ ভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকে। এক পর্যায়ে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে কারখানার সামনে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের উপর গিয়ে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকে। অবরোধের কারণে সড়কের উভয়দিকে যানবাহন আটকা পড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পুলিশের মধ্যস্থতায় বিকেল পর্যন্ত আন্দোলনরত শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে মালিকপক্ষের কয়েক দফা আলোচনা হয়। আলোচনাকালে মালিকপক্ষ আগামী ২৮ থেকে ৩০ জুনের মধ্যে শ্রমিকদের পাওনাদির আংশিক পরিশোধের ঘোষণা দিলে শ্রমিকরা তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন অব্যহত রাখে।
এদিকে আজ সন্ধ্যায় মালিকপক্ষ পুনরায় আন্দোলনরত শ্রমিক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনায় বসেন। সভায় গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াসিউজ্জামান, শিল্প পুলিশের পরিদর্শক সমীর চন্দ্র সূত্রধরসহ কারখানার মালিক উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে শ্রমিকদের মে মাসের বেতন ২২ জুন এবং গত ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের পাওনা ৫৩ ভাগ বেতন-ভাতা ১৪ জুন পরিশোধের ঘোষণা দেন মালিক পক্ষ।
এছাড়াও চলতি জুন মাসের বেতনসহ ঈদ বোনাস (আগামী ঈদুল আজহার) যথাক্রমে আগামী ১৫ ও ১৮ জুলাই পরিশোধের ঘোষণা দেয় মালিকপক্ষ। শ্রমিকরা তা মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সড়কের অবরোধ তুলে নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর সড়কে পুনরায় যানবাহন চলাচল শুরু হয়। দিনভর সড়ক অবরোধের কারণে এলাকাবাসী ও যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেককে পায়ে হেঁটে বা বিকল্প পথে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়।
এদিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়াস্থ ‘গরীব অ্যান্ড গরীব’ কোম্পানি লিমিটেড কারখানার লিংকিং সেকশনের শ্রমিকরা বকেয়া বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে একইদিন কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইসলাম হোসেন জানান, ওই পোশাক কারখানায় প্রায় এক হাজার শ্রমিক রয়েছে। শ্রমিকদের প্রতি মাসের বেতনভাতা পরবর্তী মাসের ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। অথচ নির্ধারিত তারিখের আগেই কারখানার লিংকিং সেকশনের প্রায় দেড়শ শ্রমিক তাদের পাওনা মে মাসের বেতন ভাতা পরিশোধের দাবিতে আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। পুলিশের মধ্যস্থতায় আলোচনা শেষে আগামী শনিবার সমাধানের আশ্বাস দিলে আন্দোলনরত শ্রমিকরা কাজে যোগ না দিয়ে প্রায় দেড়ঘণ্টা পর কারখানা এলাকা ত্যাগ করলে পরিস্থিতি স্বভাবিক হয়। তবে নির্ধারিত তারিখের আগেই শ্রমিকদের হঠাৎ এ ধরনের কর্মসূচির বিষয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।