গেমিং ল্যাপটপ কিনতে শিশু অপহরণ ও হত্যা, গ্রেপ্তার ৪
নরসিংদীর রায়পুরায় সিআইডি ক্রাইম পেট্রোল দেখে তাতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গেমিং ল্যাপটপ কেনার জন্য ইয়ামিন (৮) নামে শিশুটিকে অপহরণ করে হত্যা করেছে অপহরণকারীরা। গতকাল শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বাখরনগর ও পিরিজকান্দি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। অপর দুজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আজ শনিবার দুপুরে নরসিংদী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জনান নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উপজেলার উত্তর বাখরনগর গ্রামের সিয়াম উদ্দিন (১৯), সুজন মিয়া (২৪), কাঞ্চন মিয়া (৫৪) ও পিরিজকান্দি গ্রামের রাসেল মিয়া (১৮)। সিয়াম উদ্দিন ও সুজন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। আর কাঞ্চন মিয়া ও রাসেল মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
নিহত ইয়ামিন একই গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী জামাল মিয়ার ছেলে এবং বাখরনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৮ নভেম্বর রোববার সকালে ইয়ামিনের মা সামসুন্নাহার বেগম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার সময় ছেলেকে বাড়িতে রেখে যান। ভোট দিয়ে দুপুরে বাড়ি ফেরার পর থেকে ইয়ামিনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেও ছেলের সন্ধান পাওয়া যায়নি। রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপরিচিত একটি নম্বর থেকে ফোন দিয়ে ইয়ামিন তাদের হেফাজতে আছে জানায়। এ সময় মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করে তারা। টাকা দিতে না পারলে ইয়ামিনকে হত্যা করা হবে বলেও জানায়। এত টাকা দিতে পারবে না জানালে অপহরণকারী পাঁচ লাখ টাকায় ইয়ামিনকে ছেড়ে দিতে রাজি হয়। পরে বিকাশে এক লাখ টাকা পাঠানো হয়। টাকা পাওয়ার পর অপহরণকারীরা ফোনটি বন্ধ করে ফেলে। পরে গত বুধবার রাতে নিখোঁজের ঘটনায় ইয়ামিনের মা অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে রায়পুরা থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই ইয়ামিনের সন্ধানে পুলিশ তদন্তে নামে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল শুক্রবার সকালের দিকে বাখরনগর গ্রাম থেকে একটি লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে ইয়ামিনের স্বজনরা লাশটি শনাক্ত করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয় লাশ উদ্ধারের পর আসামি গ্রেপ্তারে অভিযানে নামে গোয়েদা পুলিশ। গতকাল রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বাখরনগর গ্রাম থেকে সিয়ামকে ও পিরিজকান্দি গ্রাম থেকে রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত
স্কচটেপ, বালিশ, অপহরণে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিম উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, অপহরণের দুদিন আগে গেমিং ল্যাপটপ কিনে ইউটিউভে গেম লোড করে টাকা উপার্জনের জন্য তারা ইয়ামিনকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। গত রোববার নির্বাচনের দিন রাসেল ও সিয়াম খেলার ছলে ইয়ামিনকে সিয়ামের বাড়ির নির্জন রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে মুখ, হাত পা বেঁধে বস্তায় ভরে রাখে। পরে তারা সিআইডি ও ক্রাইম পেট্রোল দেখে মোবাইলে স্ক্রিপ্টেড এপস ব্যবহার করে ভিপিএনের মাধ্যমে ইয়ামিনের মাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। পরে মুক্তিপণের টাকা না পেয়ে অপহরণের দিনই সিয়াম ও রাসেল বালিশ চাপা দিয়ে ইয়ামিনকে হত্যা করে। পরে মরদেহ বস্তাবন্দি করে গোয়ালঘরের কারের উপরে রাখে। ঘটনার চার দিন পর তারা বস্তাবন্ধি মরদেহ ধানক্ষেতে ফেলে আসে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এ ঘটনায় উত্তর বাখরনগর গ্রাম থেকে সুজন ও কাঞ্চনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েদা পুলিশ।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, আমরা লাশ উদ্ধারের পরই অভিযানে নামি। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সিয়াম ও রাসেল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।