চট্টগ্রামে চিকিৎসকের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ স্বজনদের
চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে আবারও চিকিৎসকদের অবহেলায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ রোববার সকালে নগরীর মেহেদীবাগে ম্যাক্স হাসপাতালে জান্নাত নাসরিন নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, রাত দেড়টায় অ্যাপেনডিকসের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সরোয়ার আলমগীরের স্ত্রী জান্নাত নাসরিন (৩৮)। হাসপাতাল নেওয়ার পর থেকে তার ব্যথা আরও বেড়ে যায়। এ সময় সিসিও ওয়ার্ডে নিয়ে তাকে অক্সিজেন লাগিয়ে দেওয়া হয়। এর পর রোগীর স্বজনদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে ওঠে।
মৃত জান্নাত নাসরিনের ছোট ভাই মোরশেদ আক্তার বলেন, ‘রোগী হাসপাতাল আনার পর জরুরি বিভাগ থেকে সিসিও ওয়ার্ডে পাঠানো হয়। চিকিৎসকরা শুধু সিটে নিয়ে অক্সিজেনটা লাগিয়ে দিয়েছে। আর কোনো সেবাই দেয়নি। আমরা বারবার চিকিৎসকদের বলার পরও তারা আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। বরং ধমক দিয়ে বলেছে, তারা ডাক্তার; তারা বেশি বুঝে। পরে চিকিৎসকরা পাশের রুমে ঘুমাতে চলে যায়। রোগীর অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে গেলে আবারও চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বলার পর তারা কিছু পরীক্ষার কাগজ হাতে ধরিয়ে দেয়। এসব পরীক্ষার রিপোর্ট আজ দুপুরে চিকিৎসককে দেখাতে বলে।’
মৃত জান্নাত নাসরিনের দেবর মো. হাসান জানান, রোগীকে ভর্তির পর যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হলে আমরা ক্ষুব্ধ হতাম না। প্রতিটি মিনিট তারা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। রোগীর আর্তনাদ আমারা বুঝতে পেরেছি। চিকিৎসকরা বুঝেনি, আমাদের কথা শুনেনি। আমাদের রোগী ব্যথা নিয়ে এসেছে। এরা অক্সিজেন লাগিয়ে মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।
নাসরিনের ছোট বোন জানান, ডা. শিব শংকর আসার পর আমাকে রুম থেকে বের করে দেন। এ সময় অক্সিজেন নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। তার বোন শুধু ব্যথার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
মৃত জান্নাত নাসরিনের স্বজনদের অভিযোগ রোগীকে হাসপাতালে আনার পর থেকে সিসিও ও ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা যথাযথ সেবা দেয়নি।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ব্যথা নিয়ে রোগী জান্নাত নাসরিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে জরুরি বিভাগ থেকে সার্জারি ওয়ার্ডে রাখা হয় তাঁকে।
হাসপাতালের জেনারেল ম্যানেজার রঞ্জন প্রসাদ দাশ জানান, রাতে জরুরি বিভাগ থেকে সিসিও ওয়ার্ডে ডা. শিব শংকর সাহার কাছে রোগী রেফার করা হয়। রোগীর পেইন ছিল বেশি। প্যাথেডিন দিয়ে ম্যানেজ করা হয়। তবে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা গেছেন রোগী জান্নাত।
বিজিএমইএ সহসভাপতি রাকিবুল আলম জানিয়েছেন, নিহত জান্নাত নাসরিন তাদের পরিবারের সদস্য। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদ সরোয়ার আলমগীরের স্ত্রী। নিহত জান্নাত নাসরিন দুই ছেলে এক মেয়ের জননী। এক ছেলে ও এক মেয়ে উচ্চ শিক্ষার্থে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।
রাকিবুল আলম বলেন, চিকিৎসকদের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুতে আমরা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আশাহত। এ মুহূর্তে আমরা শোকাহত। মনকে বুঝাতে পারছি না। চিকিৎসাসেবায় অবহেলা হয়েছে। চিকিৎসকের কাছে বারবার গিয়েও রোগীর স্বজনরা আশাহত হয়েছেন। তাদের ব্যবহারে আমরা অসন্তুষ্ট। এ রকম রোগীদের কীভাবে হ্যান্ডল করতে হয় ম্যাক্স হাসপাতালের জানা উচিত।
এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছে বিজিএমইএ পরিবার।
উল্লেখ্য, এর আগে চিকিৎসকের অবহেলায় এই ম্যাক্স হাসপাতালে সাংবাদিক রুবেল খানের একমাত্র শিশুকন্যা রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় দেশজুড়ে আন্দোলন করে সাংবাদিক সমাজ।