চট্টগ্রাম নগরীতে ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতা, মুক্ত নয় সিটি মেয়রের বাড়িও
কয়েক ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে আবারও তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকা। বেশিরভাগ এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা ভারি বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রকট জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিবন্দি হয়েছে সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর পরিবারও। নগরীর নিম্নাঞ্চল থেকে দ্রুত পানির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি ও দ্রুত সরে না যাওয়ায় নিম্ন এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের কবলে পড়েছে।
নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সড়ক থেকে বাড়ি পর্যন্ত হাঁটু পরিমাণ পানি। ঘরে ঢোকার দরজায় ইটের গাঁথুনি দিয়ে প্রতিরোধ দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। বাসার বাইরে তিনজন নিরাপত্তাকর্মী আনসার বসে আছে। শুধু নগরপিতার বাড়ি নয়, আশপাশের সড়কসহ বহদ্দারহাট ও বাকলিয়ার বিশাল এলাকাজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এ ছাড়া ষোলশহর, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ, হালিশহর, বাকলিয়া, চাক্তাই খাতুনগঞ্জসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানির জট তৈরি হয়েছে প্রকটভাবে। পাশাপাশি আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের নিচতলায় জলাবদ্ধতার দুর্ভোগে রোগী ও তাদের স্বজনরা। নালা নর্দমা ভরাট হয়ে যাওয়া, ভারি বর্ষণ, চলমান কাজের কারণে খালে বাঁধ না সরানো ও জোয়ারের পানিসহ নানা কারণে দুর্ভোগে পড়েছে নগরবাসী।
কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা আবু নাসের রনি জানান, রাত ২টায় বৃষ্টির মধ্যে টিনের লোহা এনে গেইট পানি প্রতিরোধ করা হয়েছে। না হলে সকালে বাসার নিচতলায় কোমর পরিমাণ পানি থাকত। তারা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। পাশাপাশি চকবাজার এলাকায় কোথাও কোথাও হাঁটু পানি আর কোথাও কোমর পরিমাণ পানিতে সয়লাব।
মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে চট্টগ্রামে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আজ দুপুর পর্যন্ত ১৭৫ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ খোরশেদ আলম জানান, মৌসুমি বায়ুর কারণে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী আরও কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং অধ্যাপক ড. আয়েশা আকতার জানান, অতিমাত্রায় বৃষ্টি, পর্যাপ্ত নালা নর্দমা না থাকায় সাগরের জোয়ারের পানি প্রতিবন্ধকতার অভাবে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নিয়মিত নালা নর্দমা পরিষ্কার না করায় দুর্ভোগ বেড়েছে। এ ছাড়া নগরীর মানুষ যত্রতত্র পলিথিনসহ নানা সামগ্রী নালা নর্দমায় ফেলার কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খাল খনন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়নে মেগা প্রকল্পের পাশাপাশি দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার কাজ আগামী দুই বছরের মধ্যে শেষ হলে জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে বলে জানান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুন থেকে আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খাল খনন, অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে পাকা রাস্তাকরণ, ১৭টি জোয়ার প্রতিরোধক ফটক, অর্ধশতাধিক সেতু ও কালভার্ট নির্মাণসহ আধুনিক সেচ ব্যবস্থার মধ্যে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানায় সিডিএ।