ছাত্রলীগনেতাকে গুলি করার অভিযোগ পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক উপআইন বিষয়ক সম্পাদক ও শাহাবাগ থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন কোতোয়ালকে গুলি করে ও কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারী ও তার ভাইদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শরীয়তপুর শহরের বটতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় জাকিরের ভাই মনির হোসেন কোতোয়ালকেও কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর শরীয়তপুর সদরের তুলাসার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক ও শাহাবাগ থানা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন কোতোয়ালের পরিবার আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেন। এর জের ধরে শরীয়তপুর পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারী ও তার সমর্থকরা গত ১৪ নভেম্বর জাকিরের ভাই মেহেদী হাসানকে কুপিয়ে আহত করেন। বাচ্চু ব্যাপারীর সমর্থকরা মেহেদীকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করতে বাধা দেন। তখন স্বজনরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। ওই ঘটনায় থানায় মামলা না নিলে ছাত্রলীগ নেতা জাকির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থানায় গিয়ে মামলা করার পরামর্শ দেন ও পুলিশকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জাকির হোসেন মামলা করার জন্য পালং মডেল থানা যান। খবর পেয়ে বাচ্চু ব্যাপারী থানায় গিয়ে জাকিরকে শাসায়। এর পর বাচ্চু ব্যাপারী তার লোকজন নিয়ে থানার বাইরে অবস্থান নেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাকির তার ভাই মনিরকে নিয়ে শহরের তটতলা মসজিদ মার্কেটে যান। সেখানে বাচ্চু ও তার সমর্থকরা তাদের দুই ভাইয়ের ওপর হামলা দিয়ে কুপিয়ে আহত করে।
অভিযোগ উঠেছে বাচ্চু ব্যাপারী আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে জাকিরের ডান পায়ে গুলি করেন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাদের ঢাকায় নেওয়া হয়। বর্তমানে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চিকিৎসাধীন আছেন।
এ ঘটনার পর রাতে পুলিশ সুপার এস এম আশ্রাফুজ্জানের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ অভিযুক্তদের আটকের জন্য রাতে শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালান। রাত ১১টার দিকে বাচ্চু ব্যাপারীর বাড়ি ও অফিসে অভিযান চালানো হয়। তখন তার চাচাত ভাই আব্বাস ব্যাপারী ও সমর্থক জুয়েল কাজীকে আটক করা হয়েছে।
জাকির হোসেনের মা মনোয়ারা বেগম মঙ্গলবার রাতে পালং মডেল থানায় এ ঘটনায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় বাচ্চু ব্যাপারী, তার ভাই চুন্নু ব্যাপারী, আবু বকর ব্যাপারীসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে।
আহত জাকির হোসেনকে ঢাকায় নেওয়ার পথে স্বজনরা ঘটনা সম্পর্কে তার বক্তব্য ধারণ করেন। বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে জাকির হোসেনকে বলতে শোনা যায়, তার ভাইকে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা না নেওয়ায় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। মন্ত্রীর পরামর্শে মঙ্গলবার তিনি মামলা করার জন্য পালং মডেল থানায় যান। তার সঙ্গে তারা বাবা, ভাই ও ভাগ্নে থানার ডিউটি অফিসারের কক্ষে অবস্থান করেন । এক পর্যায়ে বাচ্চু ব্যাপারী তার লোকজন নিয়ে থানায় প্রবেশ করেন এবং তাদের শাসান।
জাকির ভিডিওতে বলেন, ‘আমি আতঙ্কিত হয়ে এসপিকে ফোন করি, তাকে বলি আমি ভয় পাচ্ছি, থানার বাইরে অনেক লোক, বাচ্চুর লোকজন থানায় ডুকে তাওয়াতায়ী করছেন। আমি ভয় পাচ্ছি, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এসপি আমাকে বলেন, মামলা করে ওসির কাছে জমা দিতে। আমি ভাইকে নিয়ে ফটোকপি করার জন্য বটতলা এলাকায় গেলে এমপি ইকবাল হোসেন অপুর নির্দেশে বাচ্চু ব্যাপারী, প্রকাশ বন্ধুসহ কয়েকজন হামলা করে। বাচ্চু আমাকে গুলি করে। খবর পেয়ে পালং থানার ওসি আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়। তাদের অনুরোধ করি ঢাকা মেডিকেলে পাঠাতে।’
ভিডিওতে জাকিরকে কান্না করতে করতে বলতে শোনা যায়, ‘আমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। আর যদি মারা যাই আপনারা এ মৃত্যুর বিচার করবেন।’
যোগাযোগ করা হলে পৌর কাউন্সিলর বাচ্চু ব্যাপারী মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি কোনো হামলার সঙ্গে জড়িত নই। আমাদের এলাকার কিছু মানুষকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছিল। তারা ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন। জাকির সেখানে তাদের মারধর করেছে। ওই ঘটনার জেরে কেউ তার ওপর হামলা করতে পারে।’
শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপুর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি শরীয়তপুরে নেই, ঘটনার সময়ও ছিলাম না। এই মুহূর্তে ঢাকায় আছি। সেখানে কী ঘটেছিল তা জানি না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখেছি। সেখানে আমার নাম জড়ানো হয়েছে। মুমূর্ষু মুহূর্তে কেন আমার নামে মিথ্যা কথা বলল তা বুঝতে পারছি না।’
জাকির হোসেনের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। নৌকার পক্ষে কাজ করায় আমার তিন সন্তানকে কুপিয়ে ও গুলি হরে হত্যা করতে চেয়েছে। কি অপরাধ আমাদের? আমরা আওয়ামী লীগ করি? পুলিশের সামনে হুমকি দেয়, হামলা করে। কার কাছে বিচার চাইব?’
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আক্তার হোসেন বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার জাকির হোসেন যখন থানায় ছিল তখন বাচ্চু ব্যাপারী একটি অভিযোগ দিতে থানায় এসেছিল। তারা যে তাকে হামলা করবেন তা বুঝতে পারিনি। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।