ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল একসঙ্গে বহিষ্কার করল এক নেতাকে
ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রদল একসঙ্গ বহিষ্কার করেছে উভয় সংগঠনে থাকা এক নেতাকে। বিষয়টি এরই মধ্যে জেলার টক অব দ্য কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে।
এর আগে এই বিষয়টি নিয়ে পত্রিকা ও টিভিতে নিউজ হওয়ার পর থেকে জেলাজুড়ে আলোচিত হতে থাকে বিষয়টি। বহিষ্কারের এমন নজির সারা দেশের মধ্যে প্রথম বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।
মো. রায়হান রনি (২৩) আলফাডাঙ্গা পৌরসভার বাসিন্দা। তিনি যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়াশোনা করেন।
অভিযোগ উঠেছিল, তিনি উপজেলার পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক পদে থেকেই উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন।
আজ শনিবার জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তাঁকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি ও বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তামজিদুল রশিদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আলফাডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. রায়হান রনিকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপের কারণে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এদিকে, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও নীতিআদর্শ লঙ্ঘনের দায়ে রায়হান রনিকে ছাত্রদল আলফাডাঙ্গা পৌরসভা কমিটির প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো।
এমন ঘটনা বিরল বলে মন্তব্য করেছেন সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের সাবেক ভিপি, সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মনিরুজামান। তিনি ফেসবুক স্টার্টাসে বলেন, ‘এই আধুনিক যুগে এই রকম কাজ করা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যে আলফাডাঙ্গায় শতকরা ৯০ ভাগ আওয়ামী লীগের ভোট সেখানে ভাড়া করে লোক এনে ছাত্রলীগ করাতে হবে? আমাদের সাংগঠনিক ব্যবস্থা কি এতই দুর্বল? কেন এই ধরনের ঘটনা ঘটল তার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বহিষ্কার করেই দায়মুক্ত হওয়া যাবে না। আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ জানাব এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের বিচার করুন। অভিভাবক সংগঠন হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগ ও থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদককে অনুরোধ জানাব আপনারাও এই ঘটনার তদন্ত করে এর নেপথ্যের কারণ বের করে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। এই বহিষ্কৃত ছাত্রনেতা গতকাল পর্যন্ত বীরদর্পে অস্বীকার করেছেন, তিনি ছাত্রদলের কমিটির কেউ নন, এই রনি আরেকজন; এত বড় অন্যায় করার পরও তার কোনো অনুশোচনা নাই। অবশ্যই এই ছেলের পেছনে নিশ্চিত কোনো অপশক্তি আছে, সেই অপশক্তিরও মুখোশ উন্মোচন করতে হবে।শুধুমাত্র বিবেকের তাড়নায় এই পোস্টটি করলাম। এক সময় ছাত্রলীগ করতাম তাই ছাত্রলীগের কোনো খারাপ সংবাদ পেলে মনে কষ্ট লাগে তাই বিবেকের তাড়নায় লিখলাম।’
এদিকে আজ বেলা ১১টার দিকে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন রায়হান রনি। সেখানে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। ছাত্রদলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি মিথ্যা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তাকে হেয় করার জন্য এগুলো প্রচার করা হচ্ছে।’
লিখিত বক্তব্যে রায়হান আরও বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণের আগে তাঁকে ছাত্রদল নেতা বলে যে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে, সেটা দুঃখজনক।’
তার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
ছাত্রদল ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ছয় মাস আগে গত ২৩ জানুয়ারি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু ও সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান ২১ সদস্যের আলফাডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেন। ওই কমিটিতে একজন আহ্বায়ক, নয়জন যুগ্ম আহ্বায়ক, একজন সদস্যসচিব এবং বাকি সবাই সদস্য। ঘোষিত কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছে রায়হান রনির নাম।
অপরদিকে ১২ জুন আলফাডাঙ্গা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করে আংশিক কমিটি অনুমোদন করে জেলা ছাত্রলীগ কমিটি। ঘোষিত ওই পৌর কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে রয়েছে মোহাম্মদ রায়হান রনির নাম।
স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ ছাত্রদলের রায়হান রনি ও ছাত্রলীগের মোহাম্মদ রায়হান রনি একই ব্যক্তি।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ রায়হান রনি বলেন, ‘ছাত্রদলের রায়হান রনি আর তিনি এক ব্যক্তি না। তিনি সব সময় ছাত্রলীগ করেছেন, ছাত্রদল তিনি করেননি। ছাত্রদলের রায়হান রনিকে তিনি চেনেনও না।’
ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানজিদুল রশীদ রিয়ান বলেন, আমার জানামতে ছাত্রদলের রায়হান রনি আর ছাত্রলীগের মোহাম্মদ রায়হান রনি এক ব্যক্তি না। তারপরও কেউ যদি প্রমাণ দিতে পারে এই দুই রনি একজনই তাহলে রায়হান রনির বিরুদ্ধে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগে কোনো বিতর্কিত লোকের স্থান হবে না এমনকি অন্য কোনো রাজনৈতিক সংগঠন করে ছাত্রলীগে আসা যাবে না।’
ফরিদপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সৈয়দ আদনান হোসেন অনু বলেন, ‘অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে যদি প্রমাণ হয় তাহলে রায়হান রনির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘জেলা থেকে কখন কী কমিটি ঘোষণা করে, আমাদের থেকে মতামত বা পরামর্শও নেয় না। ছাত্রলীগের এ কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রেও আমার কাছ থেকে কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি। এখন শুনছি ছাত্রদলের এক নেতা কমিটির বড় পদ পেয়েছেন। আমি বলব, যেহেতু অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু ছাত্রলীগের নেতাদের উচিত হবে অভিযোগের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’