‘ছাত্র সমাজের দুর্বার আন্দোলনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে’
অচিরেই ছাত্র সমাজের ঐক্যবদ্ধ দুর্বার আন্দোলনে মানবিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক নেতৃবৃন্দ। তাঁরা এই আন্দোলনে ছাত্রসমাজের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘শিক্ষা বাঁচাও, শিক্ষাঙ্গণ বাঁচাও’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডাকসুর সাবেক নেতৃবৃন্দ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, আমানউল্লাহ আমান, সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন, সাবেক এজিএস নাজিমউদ্দিন আলম এবং সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আ স ম আব্দুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘বিগত ১৩ বছর ধরে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। নিজেদের ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে তারা দেশকে মেধাহীন করার সকল ব্যবস্থা করেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন একটি স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এসব ঘটনায় ক্ষমতাসীন দল এবং এর সহযোগী ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের নাম প্রমাণসহ উঠে আসার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উপরন্তু প্রমাণিত সত্যকে অস্বীকার করা হয়েছে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সরকারের আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হয়েছে। জাতির মনন গঠনের কারিগর শিক্ষকদের দলদাসে পরিণত করা হয়েছে। যেসব শিক্ষক নিরপেক্ষভাবে সত্যিকারের শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি এবং শিক্ষাদানের চেষ্টা করছেন তাদের বিভিন্নভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে বছরের পর বছর ধরে।’
আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘বর্তমান ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখতে সরকারি দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনকে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করেছে। ১৩ বছর ধরে ভিন্ন রাজনৈতিক মতের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে অবস্থান তো দূরের কথা, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পাঠ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এমনকি, পরীক্ষা পর্যন্ত দেওয়ার সুযোগ পায় না। সরকারি দলের সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন চর দখলের মতো করে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় দখল করে রেখেছে।’
আব্দুর রব বলেন, ‘গত ২৫ এবং ২৬ মে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসী ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। তারা মধ্যযুগীয় কায়দায় নিষ্ঠুরভাবে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে। কাপুরুষোচিতভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা চালিয়েছে।’
আব্দুর রব আরও বলেন, ‘এই হামলায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে, যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ছবি এবং ভিডিওসহ উঠে এসেছে। এই হামলায় জড়িতদের নাম পরিচয়, হামলা এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ছয়টি ছবি, ভিডিও সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলেও দলদাস বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এমনকি ঘটনার বিষয়ে জানেন না বলেও মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এই ঘটনায় হামলার শিকার ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলকে দায়ী করেছেন এমনকি মামলাও করেছেন।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে এই হামলার ঘটনার সত্যতা নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন। পরে তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের মতো ছাত্রদলকে দায়ী করেন এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দেন।’
মান্না বলেন, ‘দেশের সকল শিক্ষাঙ্গন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। শিক্ষা ব্যবস্থা এবং শিক্ষাঙ্গনকে বাঁচানো শুধু ছাত্র সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়। এই দায়িত্ব সবার।’
মান্না আরও বলেন, ‘সরকার শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলদারমুক্ত করে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে যে কর্মসূচি দরকার, আমরা তা করব।’
আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা গুম, খুন, হামলা, মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, নিপীড়নের মাধ্যমে বিরোধী মতকে দমন করে একটি একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে। কিন্তু, দেশের জনগণ বিশেষ করে ছাত্র সমাজ বরাবরই রুখে দাঁড়িয়েছে।’
নুরুল হক নুর বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা দেশে আজ এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ফ্যাসিবাদি সরকার দেশের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। জনগণের ন্যূনতম গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করেছে। মানুষের বাক স্বাধীনতা হরণ করেছে এবং শিক্ষাঙ্গণের পরিবেশ ধ্বংস করেছে।’