প্রশাসনের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
প্রশাসনের দুর্বলতা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। গতকাল শনিবার (৫ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্যান্য উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে এ কথা জানান তিনি।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, গার্মেন্টস শিল্পের অসন্তুষ্টিসহ দুর্গাপূজার নিরাপত্তার বিষয়ে কথা হয়েছে। শ্রমিকদের পাওনার ব্যাপারে সরকারকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছি। আবার যাতে ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে সেজন্য সংস্কার দরকার। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্যে নির্ভর করছে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বৈঠকের জন্য একটি কাঠামো তৈরির জন্য বলেছি।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে বলেছি। দরকার হলে নিয়মিত বৈঠকের একটা কাঠামো তৈরি করা যেতে পারে। এটা সাপ্তাহিক, পাক্ষিক হতে পারে। এ প্রস্তাবে সরকার একমত হয়েছে। সংস্কারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়। আমরা স্পষ্ট করে আমাদের মতামত দিয়েছি। আমরা বলেছি, সংস্কার আমাদের (রাজনৈতিক দল)। আমরা একটা সরকার বদলানোর আন্দোলন করছি না, নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি না, সামগ্রিকভাবে আন্দোলন করছি, যাতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করা যায়। আবার যাতে ফ্যাসিবাদ ফিরে না আসে, সে কারণে সংস্কার প্রয়োজন।’
প্রথম থেকে সংস্কারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলে আসার কথা উল্লেখ নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘সংস্কারের জন্য প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করবো আমরা। আমরা প্রশাসনের কিছু দুর্বলতা দেখছি, সীমাবদ্ধতা দেখছি। সিভিল পুলিশসহ প্রশাসনে এমন কিছু দেখছি, যা উদ্বেগ প্রকাশ করার মতো। এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংস্কারের একটা শর্তই হলো, সবাই সোটা গ্রহণ করবে। ন্যূনতম ঐক্যের প্রচেষ্টা করতে হবে। এ বিষয়ে আমরাসহ সব রাজনৈতিক দল সরকারকে সহযোগিতা করব।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘আমরা বলেছি, যতদূর পর্যন্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংস্কার করতে পারব, ততদূর পর্যন্ত আমরা সংস্কার করব। বাকি যেসব সংস্কার দরকার, তা পরের নির্বাচিত সরকার এসে করবে।’
প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদের সম্মান সফল নির্বাচনের ওপর নির্ভর করছে উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘মানুষের যদি মনে হয়, এই সরকারের লিপ্সা আছে, যদি মনে হয় অতীতের মতো ন্যায়-অন্যায় বাছবে না, অর্থের ধান্দা করবে, যদি দুর্নীতি বেড়ে যায়, তা আপনাদের ওপর বর্তাবে। আপনারা বলবেন, জানিনি, বুঝিনি সেটা হবে না। প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন। আমরা সমাজের একেবারে নিন্মস্তর পর্যন্ত কাজ করি। আমরা মনে করি, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পুরো সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’
এ সময় গণসংহতির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘গণতান্ত্রিক নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা প্রয়োজন। একটা কাঠামো তৈরি করা দরকার। জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল হতে পারে। যেখানে অংশীজনেরা বসবেন।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের বাজারে ঊর্ধ্বগতির ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। পুরনো সিন্ডিকেট আবার যে নতুন চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছি। তারা বলেছেন, চারটা কাজকে অগ্রাধিকার মধ্যে নিয়েছেন। সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। আমরা দেখতে চাই, মানুষ যেন এর সুফল পায়। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য যাতে বন্ধ হয়।’
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ করে গণতন্ত্র মঞ্চের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দল। তাদের নেতৃত্ব দেন মাহমুদুর রহমান মান্না। প্রতিনিধি দলে সাইফুল হক, জোনায়েদ সাকি ছাড়াও ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা আকবর খান, আবুল হাসান রুবেল, আবু ইউসুফ সেলিম ও ইমরান ইমন।