জনগণের বিরুদ্ধে সরকার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে : গণতন্ত্র মঞ্চ
গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা অভিযোগ করেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘর্ষ-সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আড়াল করতে সরকার দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তারা হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচারের পাশাপাশি সমস্ত গ্রেপ্তারদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার দাবি জানান।
আজ বুধবার (৩১ জুলাই) রাজধানী আল-রাজি কমপ্লেক্সের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে’ আয়োজিত সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা এসব কথা বলেন।
আজ বুধবার বেলা ১১টায় রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড়ে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সেখানে আগেই থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন। প্রস্তুত রাখা হয় প্রিজন ভ্যান। সেখানে গণতন্ত্র মঞ্চের ব্যানার কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন জোটের নেতারা।
পরে আল-রাজি কমপ্লেক্সের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে প্রাণহানির ঘটনা প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘এই হত্যার দায় সরকার এবং সরকারি দলকে বহন করতে হবে। পাকিস্তানের আমলে ব্লক রেইড করে যেভাবে ঘরে-ঘরে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন ২০২৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র, যুবক ও তরুণদেরকে ব্লক রেইড করে পাকিস্তানের আমলের মতো তাদেরকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দেশের মানুষ, ছাত্র ও তরুণরা সরকারকে গুড বাই জানিয়ে দিয়েছে। এখন সরকার টিকে আছে কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। সরকারের ভাগ্য চিকুন সুতার উপরে ঝুলছে।’
সাইফুল হক আরও বলেন, ‘সরকার এই হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করতে তারা দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে এক ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এটাকে আড়াল করতে গিয়ে তারা বলির পাঠা হিসেবে বিএনপি ও জামায়াতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে। ইতোমধ্যে সন্ত্রাস দমনের আইনে জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধ করার তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘শত শত শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। এত লাশের মিছিল, সরকার এত লাশ তৈরি করেছে, তাকে ঢাকতে পারছে না। তাকে ঢাকার জন্য আজকে আমরা দেখছি, তারা নানা রকম রাজনৈতিক কৌশল ব্যবহার করছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই, হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সমস্ত গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দিতে হবে, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সহিংসতা হয়েছে, অনেকগুলো স্থাপনা ভেঙেছে, কারা করেছে? স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত চাই। কিন্তু তার আগেই এ সমস্ত কারা করেছে, তার দায় চাপিয়ে দিচ্ছেন! সমস্ত দোষ তারা (সরকার) আন্দেলনকারী ও বিরোধী দলের ওপর দিয়েছেন। সরকার একদিকে বলে, এই কাজ জামায়াত-শিবির করেছে। তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে! অন্যদিকে তারা হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করছে। তাদের (শিক্ষার্থী) ৮৭ থেকে ৯০ ভাগ রাজনৈতিক পরিচয় নেই।’
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘সমাবেশ পণ্ড করা, সমাবেশের ওপর হামলা, মাইক কেড়ে নেওয়া, সারা দেশে নির্বিচারে যে হামলা চলছে এবং শিক্ষার্থী হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’
এ সময় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।