ছিনতাই করে পালানোর সময় হাতেনাতে ধরে গণধোলাই, গ্রেপ্তার ৪
ইমদাদুল হক ওরফে শিপন (২৬)। তিনি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ এর ডিস্ট্রিবিউশন সেলস কর্মকর্তা। প্রতিদিন সকালে ক্যাশ টাকা নিয়ে মুকসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলায় নগদের বিভিন্ন এজেন্টদের সরবরাহ করেন।
গতকাল মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) সকালেও আট লাখ টাকা নিয়ে বের হন। দুপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এজেন্টের কাছে চার লাখ টাকা সরবরাহ করেন। এরপর বাকি চার লাখ টাকা নিয়ে কাশিয়ানীর শিলটা মাদ্রাসার কাছে পৌঁছালে ধরে ছিনতাইকারী। প্রাইভেটকারে থাকা ছিনতাইকারীরা ইমদাদুল হকের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর তাঁকে মারধর করে টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে ইমদাদুলকেও প্রাইভেটকারে জোর করে তুলে নেয়। ইমদাদুলের মোটরসাইকেলটি পড়ে থাকে রাস্তায়। ঘটনাটি স্থানীয় কিছু মানুষের চোখে পড়ে। তারা ছিনতাইকারীদের প্রাইভেটকারটি (ঢাকা মেট্রো-খ ১২-০০৪৯) ধাওয়া করে। দ্রুত পালানোর সময় বেদগ্রাম, নয়াকান্দিসহ কয়েকটি স্থানে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় পথচারীরা ও ভ্যানচালক আহত হয়।
পরে এলাকাবাসী ৯৯৯ নম্বরে ও মুকসুদপুর থানা পুলিশে ফোন দিয়ে সাহায্য চায়। থানা থেকে পুলিশ বিভিন্ন সড়কে ব্যারিকেড দেয়। ছিনতাইকরারীও রুট পরিবর্তন করে এলাকার বিভিন্ন গলি ব্যবহার করে। তখনও প্রাইভেটকারটি ধাওয়া করতে থাকে স্থানীয়রা। শেষ পর্যন্ত জনতার বাধায় মুকসুদপুরের নয়াকান্দি এলাকায় আটক হয় প্রাইভেটকারটি। ছিনতাইকারীরা পালিয়ে নয়াকান্দির একটি খ্রিস্টান মিশনারীর টয়লেটে আশ্রয় নেয়। ব্যাগে থাকা প্রায় চার লাখ টাকা টয়লেটের কার্নিশে রেখে দেয়। সেখানেও পৌঁছে যায় জনতা। তাদের বের করে দেয় গণধোলাই। এদিকে এলাকাবাসীর মধ্যেই কে বা কারা টাকার ব্যাগটি নিয়ে চম্পট দেয়। পরে উত্তেজিত জনতা গণধোলাই দিয়ে মুকসুদপুর থানা পুলিশের কাছে তুলে দেয় ছিনতাইকারীদের। থানার এসআই মো. মোসলেম উদ্দীন ও এসআই শাহরিয়ার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করে প্রাইভেটকারসহ মুকসুদপুর থানায় নিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার হওয়া ছিনতাইকারীরা হলেন—মুকসুদপুর উপজেলার পশারগাতী গ্রামের নিজাম শরীফ (২৫), তার ভাই মেহেদী শরীফ (২২), মাদারীপুর সদর উপজেলার ফেরদৌস হাওলাদার (৩৫) এবং কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার পল্যাণ পাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর আলম (৩২) ।
মুকসুদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার আমিনুর রহমান বলেন, ‘ভুক্তভোগী এমদাদুল হক শিপন মুকসুদপুরের রিশাতলা থেকে আট লাখ টাকা নিয়ে নগদের এজেন্টদের কাছে সরবরাহ করার জন্য বের হন। বিভিন্ন এজেন্ট ও দোকানিদের কাছে চার লাখ টাকা সরবরাহ করেন। এরপর তাকে ধরে ছিনতাইকারীরা।’
নগদ এর গোপালগঞ্জের ম্যানেজার অশোক দাস বলেন, ‘ইমদাদুল হককে চার লাখ টাকাসহ ছিনতাইকারীরা তুলে নিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাদের আটক করে। কিন্তু তার কাছে থাকা টাকা পাওয়া যায়নি।’
মুকসুদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মোসলেম উদ্দিন বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে টাকার ব্যাগটি খুব কৌশলে যে কেউ নিয়ে যায়। তবে এই টাকার ব্যাগ উদ্ধারের জন্য মুকসুদপুর থানা পুলিশ এবং সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কাজ করছে।’
মুকসুদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু বকর মিয়া বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা ইমদাদুলকে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রাইভেটকারে তুলে নেয়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ ৪ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কাশিয়ানী থানায় মামলা করা হয়েছে।’
কাশিয়ানী থানার পরিদর্শক মো. ফিরোজ আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘যেহেতু ঘটনাটি আমাদের এলাকায় হয়েছে, তাই কাশিয়ানী থানায় নগদের মুকসুদপুর উপজেলা শাখা ম্যানেজার মো. মারুফ শেখ বাদী হয়ে গভীর রাতে একটি মামলা করেছেন।’