জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক শক্তিশালী : প্রধান বিচারপতি
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
এর আগে আজ শনিবার সকালে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান প্রধান বিচারপতি। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবরসহ সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তারা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমার মনে হয় ’৭৫-এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে বটে, তিনি শাহাদত বরণ করেছেন, কিন্তু বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন মানুষের মধ্যে। বাংলার প্রতিটি আনাচে-কানাচে আমরা বঙ্গবন্ধুকে অনুভব করি।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগে ১৫ আগস্টে আমরা সুপ্রিম কোর্টে অনুষ্ঠান করেছি। প্রত্যেক বিচারপতি তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) শ্রদ্ধা নিবেদন করে কথা বলেছেন। এখান থেকে আমার মনে হয়—জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়ে মৃত বঙ্গবন্ধু অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী। যারা বঙ্গবন্ধুকে মারতে চেয়েছিল, বঙ্গবন্ধু কিন্তু মরেননি, আমাদের মনে জীবিত আছেন।’
এরপর ধানমন্ডি-৩২ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান প্রধান বিচারপতি।
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী গতকাল বাংলাদেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান।
এর আগে আপিল বিভাগের বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ বিষয়ে গতকাল ৩০ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারক হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁর নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। ৪৭ মাস প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন শেষে গত শুক্রবার অবসরে যান তিনি। সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের স্থলাভিষিক্ত হন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি।
সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ করিবেন।’
তবে, দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন, তাঁর বিষয়ে সম্মতি দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে জানান। সে অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশ করে।
বর্তমানে আপিল বিভাগে পাঁচ বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাওয়ায় আপিল বিভাগে থাকছেন বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এর মধ্যে বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
উচ্চ আদালতে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের আগে একজন সফল আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আইনজীবী হিসেবে তিনি খুলনা সিটি করপোরেশন, কুষ্টিয়া পৌরসভা, জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ৩০ এপ্রিল ২০১৫ সাল থেকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর বড় ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি থেকে অবসরে গেছেন। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ইতিহাসে প্রথম দুই ভাই যাঁরা সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে আসীনের নজির স্থাপন করেছেন।