দিনাজপুরে কবরস্থানের জায়গায় গুচ্ছগ্রামের ঘর নির্মাণের অভিযোগ
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ৩০০ বছরের পুরনো কবরস্থানের জায়গায় সরকারি রাজস্বের টাকায় ত্রাণের বাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার আলোকডিহি ইউনিয়নের আলোকডিহি গ্রামের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আলীপাড়ায় কবরস্থানের জায়গায় উপজেলা স্থানীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশে সরকারিভাবে ত্রাণের ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। কবরস্থানটি ওই ইউনিয়নের ১ দশমিক ২৯ একর জমির উপর অবস্থিত। ওই কবরস্থানটিতে ১৯৫০ সালের গুটি বসন্ত এবং কলেরা মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের কবরস্থ করা হয়েছিল। এ অঞ্চলের কোনো সরকারি কবরস্থান না থাকায় সে সময় স্থানীয় লোকজন এখানে গণকবর দেয়।
স্থানীয় পাঁচ বয়স্ক ব্যক্তি জানান, গত ৩০০ বছর ধরে এখানে কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ওই কবরস্থানের জমিটির অবশিষ্ট জমিতে স্থানীয় মকবুল হোসেন, ফজলুল হক, সিরাজুল ইসলামসহ অন্যরা বাঁশ লাগিয়ে ভোগদখল করে আসছিল। এক পর্যায়ে গত ২০১৫ সালের ২০ মে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক কবরস্থানের জমি দখল করে বাঁশ আবাদকারীদের ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে জানান যে, কবরস্থানটি সংস্কার করা হবে। যারা কবরস্থানের জমি দখল করে বাঁশ চাষ করছেন তারা সেগুলো সরিয়ে নেন। কবরস্থানটিতে মাটি ভরাট করে মেরামত এবং পুরো কবরস্থানটি প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। চেয়ারম্যানের কথানুযায়ী সুবিধাভোগীরা তাদের বাঁশ নিধন করে সরিয়ে নেয়। এরপর চেয়ারম্যান ৪০ দিনের কর্মসূচির ১০০ জন (৪০০০ জন) লোক দিয়ে মাটি কেঁটে নতুন পুরাতন সব কবরই ভরাট করে মাঠে পরিণত করেন।
এই কবরস্থানের জমিটিতে সৃষ্ট মাঠটি জনৈক এক হিন্দু ব্যক্তিকে ৬০ হাজার টাকায় কলাচাষের জন্য দুই বছরের ইজারা দেন তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান। গত ২০১৫ সালের ২৩ জুলাই কলাচাষের জন্য কবরস্থানটি ট্রাক্টর দিয়ে চাষও করা হয়। সেই সময় আলীপাড়ার বাসিন্দাসহ স্থানীয় লোকজনের প্রতিবাদের কারণে কলাচাষ বন্ধ হয়। ওই হিন্দু ব্যক্তি তার জমা দেওয়া ৬০ হাজার টাকা ফেরত নেন। ওই কবরস্থান সংলগ্ন ফজলুল হক মেম্বারের পৈত্রিক কবরস্থানের উত্তর ও পশ্চিমপাশে কিছু অংশ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা হয়। সরকারিভাবে কবর স্থানের নামের কয়েকটি প্রকল্প হলেও রের্কডভুক্ত কবরস্থানটিতে অদ্যাবধি কোনো প্রাচীর দেওয়া হয়নি।
২০২১ ২১ সেপ্টেম্বর সাবেক আলোকডিহি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক ওই কবরস্থানে গুচ্ছগ্রামের ত্রাণের ঘর নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কবরস্থানের পাশের আলীপাড়ার বৃদ্ধ মকবুল হোসেন বলেন, ‘এটি একটি এলাকার পুরাতন কবরস্থান। ব্রিটিশ ম্যাপে কবরস্থানের নামে রেকর্ড আছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ঘর নির্মাণ করে কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট করছেন।’
স্থানীয় বাসিন্দা মোকলেছ বলেন, ‘আমি আমার মায়ের কাছে শুনেছি এই কবরস্থানে অনেক কবর ছিল।’
গতকাল ২৬ সেপ্টেম্বর রোববার দুপুরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান গত শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে এসে হুমকি দিয়ে আপাতত বাঁশের খুঁটি দিয়ে জোরপূর্বক কবরস্থানের জায়গায় বাঁশের কাঠামোর ঘর নির্মাণ করে কবরস্থান দখল শুরু করেছেন।
কবরস্থানের জায়গায় নির্মিত ঘরটির বরাদ্দ পাচ্ছেন আলীপাড়ার জাফর মনসুর আলীর স্ত্রী ছাবেদা বেগম (৫০)। তিনিও স্বীকার করেন যে, ‘এখানে একসময় কবর ছিল। অনেক জায়গায় কবরের উপর বাড়ি করি মানুষ থাকে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা সিদ্দীকা বলেন, ‘কবরস্থানের কথা আগে কেউ বলেনি। এখন জেনেছি। কবরস্থানের জায়গা হলে ওই স্থানে ঘর করা হবে না।’
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইরতিজা হাসান বলেন, ‘প্রয়োজনীয় তদন্ত করে উপর্যুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান ও তৎকালীন আলোকডিহি ইউপি চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক মুঠোফোনে বলেন, ‘জমিটি অনেকেই ভোগদখল করে খাইত। ১০ থেকে ১১ বছর আগে আমি বলেছিলাম জায়গা ছেড়ে দেন। ওই স্থানে অর্ধেক কবরস্থান ও অর্ধেক গুচ্ছগ্রাম হবে। সবাই মেনে নিয়েছিল। এখন যে জায়গায় ঘর নির্মাণ হচ্ছে, সে জায়গাটিতে কখনই কোনো কবর ছিল না।’