দেশের ৬৫৪ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা স্মারক তুলে দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা। এই প্রথম নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদানের উদ্যোগ নেয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ৬৫৪ জন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
নূর আলম, নীলফামারী
নীলফামারীতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দুই নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাদের হাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সম্মাননা স্মারক, শাড়ি, চাদর তুলে দেওয়া হয়।
এ সময় তাদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য রাবেয়া আলীম। এর আগে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন।
সংবর্ধিত দুই নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা হলেন জলঢাকা উপজেলার ধর্মপাল ইউনিয়নের খেড়কাটি এলাকার তহর মোল্লার মেয়ে শাহেলা বেগম ও সৈয়দপুর উপজেলা শহরের বাঙ্গালীপুর নিজপাড়া এলাকার নাইমুল ইসলামের মেয়ে নূর নাহার বেগম।
এর আগে রাজধানী ঢাকায় জাতীয়ভাবে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক।
নীলফামারীর এই অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য রাবেয়া আলীম, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান, জেলা মহিলাবিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক আনিসুর রহমান ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহিদ মাহমুদ বক্তব্য দেন।
জেলা মহিলাবিষয়ক কার্যালয়ের উপপরিচালক আনিসুর রহমান জানান, এই প্রথম নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদানের উদ্যোগ নেয় মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
আসাদুর রহমান জয়, নওগাঁ
নওগাঁ জেলার ১০ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়েছে। আজ দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা হিসেবে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারের হাতে ক্রেস্ট ও উত্তরীয় তুলে দেন নওগাঁর জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান।
সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন নওগাঁ সদর উপজেলার কাজীপাড়া মহল্লার শহীদা বেগম, রাণীনগর উপজেলার আতাইকুলা গ্রামের মৃত মায়া বাংলা, রাসমনি সূত্রধর, মৃত সুষমা পাল, কালী পাল, মৃত সন্ধ্যা রাণী পাল, গীতা রাণী পাল, মুক্তি রাণী পাল, পূর্ণিমা রাণী পাল ও সাপাহার উপজেলার তিলনা গ্রামের মৃত পান বিলাসীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইব্রাহিম, রাণীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো, নওগাঁ সদর উপজেলার ইউএনও মির্জা ইমাম উদ্দীন, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ দুলু, রাণীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেনসহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা।
কে এম সবুজ, ঝালকাঠি :
ঝালকাঠিতে দুই বীরাঙ্গনাসহ আট নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। তাদের একটি করে শাড়ি, শাল ও মাস্ক উপহার দেন ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী। আজ সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের সভাকক্ষে এ সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সম্মাননাপ্রাপ্ত আট নারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা হলেন কাঁঠালিয়ার পশুরিবুনিয়া গ্রামের শাহানা সিদ্দিকা, সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশার ডুমুরিয়ার শেফালি রাণী রায়, নথুল্লাবাদ বীরকাঠি গ্রামের মোসা. আলেয়া বেগম (বীরাঙ্গনা), ঝালকাঠি শহরের পশ্চিম চাঁদকাঠির রমা রাণী দাস, পোনাবালিয়ার দিয়াকুল গ্রামের মোসাম্মৎ সেলিনা রহমান, কীর্ত্তিপাশার রুন্সি গ্রামের অঞ্জলী রায়, নথুল্লাহবাদ গ্রামের সীমা বেগম (বীরাঙ্গনা) ও চাচৈর গ্রামের খন্দকার মুন্নুজান। এর মধ্যে তিনজন নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মরণোত্তর সম্মাননা দেওয়া হয়।
সম্মাননা ও উপহার পেয়ে খুশি নারী মুক্তিযোদ্ধারা। সম্মাননা পেয়ে তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এ সময়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক তরুণ কর্মকার, ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মনিরুল ইসলাম তালুকদার ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
হাসিবুর রহমান হাসিব, কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে ১১ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। আজ দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। সম্মাননা গ্রহণ করেন জেলার জীবিত ১০ নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা। এ সময় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি বীরপ্রতীককেও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম, পৌর মেয়র মো. কাজিউল ইসলাম, জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহানা আক্তার প্রমুখ।
জেলা মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগে নারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা হিসেবে ক্রেস্ট, শাড়ি, শাল ও মাস্ক বিতরণ করা হয়।
এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা
পাবনার বীর মুক্তিযোদ্ধা গীতা তালুকদারসহ (পূরবী মৈত্র) সাত নারী মুক্তিযোদ্ধাকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। আজ সকাল ১১টার দিকে পাবনা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট রণেশ মৈত্র, পাবনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা বেবী ইসলাম, পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ বি এম ফজলুর রহমান, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদ সভাপতি আব্দুল মতীন খান, সাধারণ সম্পাদক শহীদুর রহমান শহীদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা চন্দন চক্রবর্তী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বাবু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা কানিজ আইরিন প্রমুখ।
যেসব নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা প্রদান করা হয় তারা হলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি গীতা তালুকদার (৭০), আটঘরিয়া উপজেলার ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের সাধু মিস্ত্রির মেয়ে সোনা বালা (৭২), আটঘরিয়া উপজেলার বংশীপাড়ার ভুবন সরকারের মেয়ে মায়া রাণী (৭৩), আটঘরিয়া উপজেলার কর্ন্দপপুর গ্রামের ছোলেমান প্রামানিকের মেয়ে মোছা. জমেলা খাতুন (৭৬), পাবনা শহরের রাধানগর এলাকার ক্ষিতীশ চন্দ্রের মেয়ে সুমতি রাণী সাহা (৭০), বেড়া উপজেলার সম্ভুপুর গ্রামের শফি উদ্দিনের মেয়ে শামসুন্নাহার (৭৫) এবং সাঁথিয়া উপজেলার নন্দনপুর গ্রামের নগেন হালদারের মেয়ে বানু নেছা (৭৮)। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাবনার এই সাত নারী মুক্তিযোযোদ্ধা সম্মুখ সমরে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
উল্লেখ্য, নারী বীরমুক্তিযোদ্ধা গীতা তালুকদার (পূরবী মৈত্র) একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রবীণ সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ভাষাসৈনিক রণেশ মৈত্রের সহধর্মিণী।