দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বাম জোটের হরতাল
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে আজ সোমবার আধা বেলা হরতাল পালন করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অর্ধদিবস হরতাল চলেছে। এতে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা—পল্টন ও শাহবাগের ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকে। তবে, নগরীর অন্য সড়কগুলোতে যানচলাচল করতে দেখা গেছে।
আজ সোমবার সকাল ৬টা থেকে শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি, বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে এ হরতাল পালন শুরু করে বাম দলগুলো।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের লাগামহীন দাম এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ বন্ধে বাম গণতান্ত্রিক জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীরা। আজ সকাল ৮টা থেকে তাঁদের এ অবরোধ শুরু হয়। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে মিছিল শুরু করেন তাঁরা।
শাহবাগ মোড়ের প্রতিটি দিক অবরোধ করে অবস্থান নেন হরতাল সমর্থকেরা। তাঁরা রাস্তার ওপর কাঠ, ব্যানার পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানান।
হরতালের বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি শিমুল কুম্ভকার বলেন, ‘করোনার দুই বছরে জনগণের আয় কমেছে। এ মুহূর্তে দ্রব্যমূল্য বাড়লেও আয় কিন্তু বাড়েনি। এ অবস্থায় আমরা যদি প্রতিবাদ না করি, তাহলে দামের এ ঊর্ধ্বগতি থামবে না। তাই, বাম জোটের ডাকা হরতালে আমরা সমর্থন দিয়ে এখানে অবস্থান করছি। আমরা শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করছি।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাজিব কান্তি রায় বলেন, ‘দামের এ ঊর্ধ্বগতি যদি এভাবে চলতে থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্নের দিকে এগোবে। এ ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বাম জোটের ডাকা হরতালের সমর্থনে আমরা এখানে অবস্থান করছি।’
পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকালে হরতালে সমর্থনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের শরিক দল সিপিবি, বাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির নেতাকর্মীরা পল্টন মোড় এলাকায় মিছিল বের করেন। মিছিলটি মতিঝিল, গুলিস্তান, বিজয়নগর ঘুরে আবার পল্টন মোড়ে অবস্থান নেয়। পল্টন মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেতাকর্মীরা ওই এলাকায় অবরোধ দেন।
এদিকে, বাম জোটের হরতালকে কেন্দ্র করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যদের সাদা পোশাকে পল্টন মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
পল্টন মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ থেকে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে হরতাল পালন করছি। মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এ হরতালে কোনো ধরনের উসকানি দেবেন না।’
বাম জোটের নেতারা বলেন, যারা হরতালে গাড়ি চালাবেন, তাঁরা জাতির শত্রু। এঁরা সরকারের দালাল। এঁদের চিহ্নিত করা হবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘হরতালের সমর্থনে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় বাম জোটের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করলে সেখান থেকে পুলিশ নয় জনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া সারা দেশে মিছিলে বাধা দেওয়া ও হামলার খবর আসছে আমাদের কাছে।’
হরতালের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটে, রিকশায় করে অনেককে গন্তব্যস্থলে রওনা দেন।
এদিকে, রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল এবং এর আশপাশের কয়েকটি সড়কে তেমন গাড়ি না দেখা গেলেও অন্যান্য এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক দেখা গেছে।
নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে গত ১১ মার্চ পুরানা পল্টনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কার্যালয় মুক্তিভবনের হলরুমে এক সংবাদ সম্মেলনে হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে বাম জোট।
এদিকে, রাজধানীর বাইরে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে চলেছে বামজোটের ডাকা আধা বেলা হরতাল।
খুলনায় বামজোটের পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। নগরীর ডায়াবেটিস সমিতির সামনে থেকে হরতালের সমর্থনে সকালে বামজোটের নেতাকর্মীরা মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দিয়ে পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করে।
হরতালের সমর্থনে আজ সকালে ময়মনসিংহ স্টেশন রোড এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করেন বামজোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় র্যাব সদস্যেরা তাঁদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলায় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়। পরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের আশ্বাস দেন হরতাল পালনকারীরা।
রংপুর নগরীতে আজ সকালে হরতালের সর্মথনে বিক্ষোভ মিছিল হয়। হরতালে সব ধরনের যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। খোলা রয়েছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
আজ ভোরে কুমিল্লার কান্দিরপাড় চত্বরে অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতাকর্মীরা। এ সময় পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এ ছাড়া জয়পুরহাট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, নীলফমারীসহ সারা দেশে চলেছে বামজোটের ডাকা আধা বেলা হরতাল।