নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব ইসলামী আন্দোলনের
সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের পরিবর্তে নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। একই সঙ্গে দলটি রাষ্ট্র সংস্কারে ১৯ দফা প্রস্তাব ঘোষণা করেছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ সোমবার (২ জানুয়ারি) দলটির জাতীয় সম্মেলনে এ প্রস্তাব ঘোষণা করেন যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
সম্মেলনে ইসলামী আন্দোলনের আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন। সম্মেলনে সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকউল্লাহ বুলু, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘ক্ষমতার পালাবদলের সময় দেশে যুদ্ধাবস্থা তৈরি হয়। কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন বর্তমান বাস্তবতায় সম্ভব নয়। সেজন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের প্রস্তাব করছে।’
আরেক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘জনমতের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্রের সংস্কার, বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র তথা সংবিধানকে যথেচ্ছ সংশোধন করে জন-অধিকার খর্ব করার ঢাল বানানো হয়েছে। বর্তমান সংবিধান নিয়ে দেশের কোনো পক্ষই সন্তুষ্ট নয়। বিরোধীরা এটাকে সংস্কার করতে চাইছে।’
সরকার পক্ষও বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরত যাওয়ার কথা বলে বর্তমান সংবিধানের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে। ঐতিহাসিক বাস্তবতা ও চলমান গণঅসন্তোষ বিবেচনায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এ ভূখণ্ডের মানুষের হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য বোধ, বিশ্বাস ও মনস্তত্ত্ব আমলে নিয়ে এবং গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে সংবিধানের সামগ্রিক সংশোধনের প্রস্তাব করছে।
দলটির অন্যান্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, সেপারেশন অব পাওয়ার নীতির প্রয়োগ করে শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও ন্যায়পাল বিভাগকে পরস্পর থেকে স্বাধীন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা হবে।
অর্থ খাত, অর্থনীতি, শিল্পায়ন, কৃষি ও জ্বালানি খাতে বিদ্যমান সব দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করতে, খাতগুলোকে শক্তিশালী ও বহুমাত্রিক করতে এবং স্বনির্ভর এনার্জি সেক্টর নির্মাণে জাতীয় কাউন্সিল গঠন করা, উৎপাদক কৃষক ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় বাজার ব্যবস্থাপনা তথা পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, পরিবহণ ও বাজারজাতকরণসহ পুরো ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত ব্যবস্থার অধীনে এনে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল করা, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি গড়ে তোলা হবে।
সম্মেলনে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘সরকারে থাকলে সমালোচনা হবে। সরকারে থাকলে সহ্য করার ক্ষমতাও থাকতে হয়, চামড়া মোটা হতে হয়। আর সেটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আছে।’
বরকতুল্লাহ বুলু বলেন, ‘যেসব জায়গায় রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে তা জাতীয় সরকার মেরামত করবে, বিএনপি এককভাবে করবে না।’
বাংলাদেশের রাষ্ট্র কাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে উল্লেখ করে বরকতুল্লাহ বুলু বলেন, ‘বিচারব্যবস্থা ও আইনের শাসন ধ্বংস হয়ে গেছে। এগুলোর মেরামত করা দরকার। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করার লক্ষ্যে সমমনা সব রাজনৈতিক দল নিয়ে আগামী দিনে নির্বাচন করতে হবে।’