নেত্রকোনায় গারোদের নবান্ন উৎসব ‘ওয়ানগালা’ শুরু

আসছে বছর ভালো ফসল এবং সন্তান ও পরিজনরা যেন ভালো থাকে আর দেশের যেন মঙ্গল হয়-এই কামনায় নেত্রকোনার দূর্গাপুরের বিরিশিরিতে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী প্রধান ধর্মীয় উৎসব ওয়ানগালা।
দূর্গাপুরের বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির আয়োজনে ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে এতিহ্যবাহী সা-সাৎ-সাওয়া ধুপারিতের মধ্য দিয়ে অতিথিদের স্বাগত জানানো হয়।
আজ শনিবার দুপুরে ওয়ানগালা উৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজি আবদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় স্বাগত বক্তব্য দেন বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমির পরিচালক সুজন হাজং।
প্রথম পর্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথি ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ফকরুজ্জামান জুয়েল, দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজীব উল আহসান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ রিজিয়নের ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান, লেখক ও গবেষক মনীন্দ্র নাথ মারাক, দূর্গাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ প্রমুখ।

দ্বিতীয় পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার প্রলয় চিসিম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুদ্রণ ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক ব্রেঞ্জন চাম্বুগং, লেখক ও গবেষক থিওফিল নকরেক, দূর্গাপুর প্রেসক্লাব সভাপতি এস এম রফিকুল ইসলাম রফিক প্রমুখ।
দুই দিনব্যাপী উৎসব উদযাপন উপলক্ষে প্রথম দিনে গারো সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা বিচিত্র পোশাক ও পাখির পালক মাথায় দিয়ে লম্বা ডিম্বাকৃতি ঢোলের তালে তালে নাচে। এটি গারোদের বছরের প্রধান বিনোদনের দিন। সারা গারো পাহাড় মন্ত্র ও ঢোলের শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে।
এছাড়া ওয়ানগালা অনুষ্ঠানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য খ্রিস্টভক্ত এবং গারাগানজিং, কতচু, রুগা, মমিন, বাবিল, দোয়াল, মাতচি, মিগাম, চিবক, আচদং, সাংমা, মাতাবেং ও আরেংসহ বিভিন্ন গোত্রের গারো সম্প্রদায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
দিনব্যাপী আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ ওয়ানগালার মূল প্রবন্ধ পাঠ, নাগড়া, আদুরী, দামা ও মোমবাতি প্রজ্জ্বালন, বিশেষ প্রার্থনা এবং গারোদের নিজস্ব কৃষ্টির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
কালের পরিক্রমায় গারোরা ধীরে ধীরে খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর তাদের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক প্রথাটি এখন ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে একত্রে করে পালন করা হয়। এক সময় তারা শস্যদেবতা মিসি সালজংকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করলেও এখন অনেকে নতুন ফসল কেটে যিশুখ্রিস্ট বা ঈশ্বরকে উৎসর্গ করে ওয়ানগালা পালন করে থাকে।