নেত্রকোনায় ঝড়ো হাওয়ায় কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ
নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের ফসলি মাঠে কৃষকের কান্নায় ক্রমশ ভারি হয়ে উঠছে আকাশ বাতাস। কালবৈশাখীর নির্মম ছোবলে হাজার হাজার কৃষকের স্বপ্ন বিলীন হয়ে গেছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় এক লাখ ৮৪ হাজার ৯৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার মধ্যে হাওরের খালিয়াজুরী উপজেলায় ১৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর, মদনে ১৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৭ হাজার ৪৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে বলে আশা ছিল কৃষকদের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানায়, বেশির ভাগ জমির ধানই পাকতে শুরু করেছে। আর কয়েক দিনের মধ্যে ব্রি-আর ২৮ জাতের ধানের পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের ধান কাটা শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে আগাম জাতের লাগানো কিছু কিছু জমিতে ধান কাটা শুরু হয়েছে। সারা বছরের একমাত্র হাড়ভাঙ্গা কষ্টে ফলানো সোনার ফসল ঘরে তুলতে অনেকেই বিভোর সময় পার করছে। জমিতে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা গিয়েছিল। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে কালবৈশাখী ঝড়ের গরম বাতাস যেন কৃষকদের সব স্বপ্ন বিলীন করে দিয়েছে। ধার-দেনা করে এক ফসলি জমির ফসল হারিয়ে পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছে না কৃষকরা।
মদনের তিয়শ্রী ইউনিয়ের বাগজান গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া, খালিয়াজুরী উপজেলার মেন্দীপুর গ্রামের আরিফ মিয়া, মোহনগঞ্জ উপজেলার হাটনাইয়া গ্রামের হাসেম মিয়া, নলজুরী গ্রামের হেলিম মিয়াসহ অনেকেই জানান, হাওরের এক ফসলি বোরো জমির ফসল দিয়ে সারা বছর পরিবার নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা হয়। গতকালের ঝড়ো বাতাসে জমির সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ঋণ করে জমিতে ফসল উৎপাদন করেছিলাম। এখন সারা বছর খাব কি আর কি দিয়ে ঋণ পরিশোধ করব? সরকার যদি আমাদের পাশে না দাঁড়ায় তাহলে পথে বসা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।’
মদন উপজেলার মাঘান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম সামসুল আলম চৌধুরী কায়কোবাদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, ইউনিয়নের প্রায় ১৪ আনা জমির ফসল ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য রেবেকা মোমিনকে জানিয়েছেন।
আজ সোমবার সকাল থেকে মদন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদসহ কৃষি বিভাগের লোকজন উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।
মদন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা রায়হানুল হক জানান, গতকাল সন্ধ্যায় কালবৈশাখী ঝড়ে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে মদন, মোহনগঞ্জ ও কালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল পরিদর্শন করছি। যেসব জমিতে এখনও ধান পাকে নাই সে সমস্ত জমির ধান গরম বাতাসের কারণে চিটা হতে পারে। আমাদের লোকজন মাঠে রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ যা নিরূপণ করা হয়েছে তাতে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’