পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি
পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। প্রতিটি হোটেল বা মোটেলে ৫০ শতাংশ আবাসন খালি রাখার কথা থাকলেও, আবাসন খালি রাখছে না হোটেল কর্তৃপক্ষ।
প্যাসিফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের মহাসচিব তৌফিক রহমান জানান, কক্সবাজারসহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটক সংখ্যা বেশি হওয়ায় হোটেলগুলোতে ৫০ শতাংশ আবাসন খালি রাখার ইচ্ছা থাকলেও সরকারের শর্ত মানছে না হোটেল কর্তৃপক্ষ। পর্যটন এলাকায় প্রতিটি হোটেলে প্রচুর পর্যটক রয়েছে। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতের ওপর স্থানীয় প্রশাসনকে আরও জোর দিতে হবে। তা না হলে, এখন যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে পর্যটক আসছে, তাতে কোভিড-১৯ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তৌফিক রহমান আরও বলেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে কী পরিমাণ পর্যটক রাখা যাবে কিংবা প্রতিদিন কত জন পর্যটক আসা যাবে—এ বিষয়ে পর্যটক সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর মনিটরিং থাকতে হবে।
দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজার। সেখানে ছোট-বড় হোটেল-মোটেল আছে পাঁচশ’র বেশি। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিওএবি) সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, ‘উন্মুক্ত স্থানে পর্যটকেরা কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। ট্যুরিজম আসলে কন্ট্রোলে থাকে না। আমরা মিটিং করে অপারেটরদের বলছি, স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্যুর অপারেট করতে। কিন্তু, যাঁরা ব্যক্তিগতভাবে যাচ্ছেন, এসব পর্যটক এলে স্বাস্থ্যবিধি তেমন মানছেন না। ব্যক্তিগতভাবেই বেশি পর্যটক গিয়ে থাকেন।’
রাফিউজ্জামান জানান, এখন ছুটির দিনে কক্সবাজারসহ প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে মানুষের ভিড়। সরকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বললেও, মানুষ তেমন মানছে না। দীর্ঘদিন পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মানুষ কোথাও বেড়াতে যেতে পারছিল না। খুলে দেওয়ার পর প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে এখন প্রচুর পর্যটক রয়েছে।
সরকারের নির্দেশনা মেনে হোটেলগুলোর ৫০ শতাংশ আবাসন খালি রাখছে কি-না, জানতে চাইলে টিওএবি’র সভাপতি বলেন, ‘পর্যটন এলাকায় পাঁচ তারকা এবং উন্নত মানের হোটেলগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে হয়তো বা আবাসন খালি রাখছে। কিন্তু, ছোটখাট হোটেলগুলো কোনো আবাসন খালি রাখছে না। তবে, এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন বলতে পারবে—৫০ শতাংশ আবাসন খালি রাখার বিষয়ে কতটুকু কোনো হোটেল মানছে।’
টিওএবি’র সভাপতি আরও বলেন, পর্যটন এলাকায় স্থানীয় প্রশাসন মাইকিং এবং ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছেন। সেটি আরও জোরদার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে পর্যটকদের আরও সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কোভিড বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা কক্সবাজার থেকে ঘুরে আসা কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে কক্সবাজার এলাকায় ভালো মানের হোটেলে আগে থেকে বুকিং দিতে হয়। পর্যটকদের চাহিদা থাকায় এখন প্রায় প্রতিটি হোটেলই বুকড। সে হিসাবে, সরকারের নির্দেশনা মেনে ৫০ শতাংশ সিট খালি রাখার কথা থাকলেও, মানা হচ্ছে না। কারণ পর্যটকদের বেশি চাহিদা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মামুনুর রশীদ দাবি করেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পর্যটকেরা থাকছে। হোটেল-মোটেলগুলোতে আমরা প্রতিনিয়ত মনিটরিং করছি। সেইসঙ্গে হোটেল অ্যাসোসিয়েশন এবং টুরিস্ট পুলিশ সহযোগিতা করছে, যেন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আবাসন খালি এবং স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মানা হয়।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ রোধে প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্র, হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টকে সরকারি প্রজ্ঞাপনে নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলতে হবে। পর্যটন কেন্দ্রে সবাইকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, এর কোনো প্রকার ব্যত্যয়ের প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, যদি কেউ সরকারের নির্দেশনা না মানে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর পর্যটনকেন্দ্রগুলো সরকার খুলে দিয়েছে। তবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাইকে চলতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, দেশের পর্যটন গন্তব্যগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করতে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন বাস্তবায়ন করবে।
সরকারের নির্দেশনা না মানার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে। হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলো সরকারের বিধি উপেক্ষা করে ৫০ শতাংশের বেশি আবাসনের ব্যবস্থা করছে কি-না, তা নিয়মিত মনিটরিং করছে স্থানীয় প্রশাসন। যে সব হোটেল ৫০ শতাংশ আবাসন খালি রাখছে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে—পর্যটকদের সচেতন করতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক, স্কাউটসহ অন্যান্য অংশীজনদের সম্পৃক্ত করে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট সঠিকভাবে নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে হবে এবং জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। প্রশাসনের স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পর্যটন খাত সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের নিয়ে নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও পরিবীক্ষণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কী ব্যবস্থা নেবেন—জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলো সরকারের নির্দেশনা সঠিকভাবে পরিপালন করছে কি-না স্থানীয় প্রশাসন সেটি শক্তভাবে মনিটরিং করবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, জীবিকা ও অর্থনীতির কথা চিন্তা করে পর্যটন গন্তব্যগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে কোভিড-১৯-এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছে। এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যাতে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে আবার এ খাত বন্ধ হয়ে যায়।